Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভারতে কৃষকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরকার


আগামী নিউজ | অরূপ সেন প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১, ০৪:১৩ পিএম
ভারতে কৃষকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণে নেমে গেল সরকার। পরিচিত ছকেই সাধারণতন্ত্র দিবসের দিনে বিক্ষিপ্ত হাঙ্গামার ঘটনাকে সামনে রেখে কৃষক আন্দোলনকে ভাঙতে সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের পুলিশ। কৃষকদের প্রতিবাদের জায়গাগুলিতে হামলা হচ্ছে, পুলিশ অবস্থানরত কৃষকদের হটে যাবার ফতোয়া দিচ্ছে। সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।

তাঁদের গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। উত্তর প্রদেশ-দিল্লির সীমান্ত গাজিপুরে ২৭ জানুয়ারি রাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পুরো প্রতিবাদস্থল অন্ধকার করে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও কয়েক হাজার কৃষক দৃঢ়পণ থেকে যান। রাতেই হয় স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল। সকালে জল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লঙ্গর চালানোর জন্য যে জলের ট্যাঙ্ক মজুত করা হয়েছিল, সেখানে প্রশাসন জল ভরতে দেয়নি। শৌচালয়ের সামনেও জল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জলের ড্রাম নিয়ে জল ভরতে গেলেও পুলিশ বাধা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। গাজিপুরে লঙ্গরে কাজ করছেন উত্তরাখণ্ডের বেজপুরের কমলজিৎ। ২৮ জানুয়ারি তিনি বললেন, লঙ্গর তো সবার জন্য। সারা বছর লঙ্গর চলে।

লঙ্গরে জল বন্ধ করলে কী হাল হবে মোদী নিজেও বুঝতে পারছেন না। উত্তর প্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, দেড়দিনের মধ্যে অবস্থান তুলে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীরই তেমন নির্দেশ, এমন বার্তাও পাওয়া গেছে। সকালেই গাজিপুরে পৌঁছোন হান্নান মোল্লা, রাকেশ টিকায়েত, সাংসদ কেকে রাগেশ, কৃষকসভার নেতা পি কৃষ্ণপ্রসাদ সহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের নেতারা। কৃষকদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। কৃষকরা জানিয়ে দেন, অবস্থান চলবে। সরে যাবার কোনও প্রশ্নই নেই। এদিনও ২৪ জন কৃষক রিলে অনশনে বসেছিলেন। দুপুরে মঞ্চের সামনে সমাবেশ হয়।

হান্নান মোল্লা বলেন, আন্দোলন চলবে। পুলিশ মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। যাঁরা সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন পুলিশের নির্ধারিত পথেই প্যারেডে অংশ নিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হচ্ছে। সরকার দমনপীড়নের পথ নিয়েছে। জেলে যেতে হলে যাব। কিন্তু আন্দোলন থামবে না। উপস্থিত কৃষকরা সমবেতভাবে এই আহ্বানকে সমর্থন জানান। রাকেশ টিকায়েতও বলেন, অবস্থান উঠবে না। সরকার যা পারে করে নিক, লড়াই চলবে। উত্তর প্রদেশের কিসানসভার নেতা ডিপি সিংও ভাষণ দেন। আরএসএস-বিজেপি’র একদল লোক জমায়েত হয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলতে থাকে। তারা কৃষক জমায়েত ভেঙে দেবার দাবি জানাতে থাকে।

রাতে ফের সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশে রাকেশ টিকায়েত বলেন, আমরা গ্রেপ্তার বরণ করব না। পুলিশ যদি মনে করে আমাদের মেরে ওঠাবে, তাহলে সেই চেষ্টা করুক। জল বন্ধ করে দিয়েছে, যতক্ষণ গ্রাম থেকে জল না আসবে আমি জলই খাব না। কেকে রাগেশ বলেন, আমরা আরএসএস, উত্তর প্রদেশের পুলিশের চাপে পিছিয়ে যাব না। এদিন রাত পর্যন্ত গাজিপুরে উত্তেজনার পরিস্থিতি হয়ে রয়েছে। স্থানীয় বিজেপি বিধায়কের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা এসে পুলিশের সামনেই স্লোগান দিচ্ছে, কৃষকদের পিটিয়ে তাড়াও, আমরা তোমাদের সাথে আছি। জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপার এসেছিলেন। কিন্তু কৃষকের চাপে তাঁরা প্রথম দফায় পিছিয়ে গেছেন। গভীর রাতে গাজিপুরে আক্রমণ হতে পারে বলে আশঙ্কার মধ্যেই এককাট্টা হয়ে রয়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ থেকে শুক্রবার নতুন তিরিশ হাজার ট্রাক্টর আসবে গাজিপুরে।

পশ্চিম উত্তর প্রদেশ থেকে কৃষকদের আসার পথ বন্ধ করতে রাস্তা আটকাচ্ছে পুলিশ। সিঙ্ঘুতেও আরএসএস একদল লোক পাঠিয়েছিল। তাঁদের মিডিয়ায় ‘স্থানীয় মানুষ’ বলে দেখানো হলেও তাঁদের মুখেও ছিল ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’। তবে তাঁরা বিরাট জমায়েতের সামনে সুবিধা করতে পারেনি। সিঙ্ঘুতে আজ সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতারা ‘সদভাবনা যাত্রা’ করেন। প্রায় ১৬ কিলোমিটার পথ তাঁরা যান, ট্রাক্টর ও ট্রলিতে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। যে ট্রাক্টরে নেতারা গেছেন, সবক’টিতেই লাগানো ছিল জাতীয় পতাকা। বলবীর সিং রাজেওয়াল, দর্শন পাল, জগজিৎ সিং দালেওয়ালের মত নেতারা ছিলেন। সামনে ছিলেন বুটা সিং বুর্জগিল, যোগীন্দার সিং উগ্রাহন। তাঁরা কৃষকদের বলেন, পুলিশের সংখ্যা বাড়বে। এতে আমরা পিছু হটব না।

সিঙ্ঘুতেও রাতে বিরাট পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পালওয়ালে তুলনায় কম সংখ্যক কৃষকের জমায়েত ছিল এতদিন। উত্তর প্রদেশের চার জেলা ও স্থানীয় কৃষকদের সেই জমায়েতে এদিন পুলিশ ও আরএসএস হামলা চালায়। তারা মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। ওই অবস্থানস্থল থেকে কৃষকরা সরে এসেছেন। মানসা ব্যারেজেও একটি ছোট আকারের অবস্থান চলছিল। পুলিশ সেটিও ভেঙে দিয়েছে। কৃষকরা পিছিয়ে এসে শাহজানপুরে অবস্থানস্থলে রয়েছেন। বাগপতে ২৭ জানুয়ারি রাতেই একটি প্রতিবাদ মঞ্চ পুলিশ ভেঙে দিয়েছে। টিকরির সামনে পুলিশ ফের ব্যারিকেড তুলে দিয়েছে। রাস্তায় গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এদিকে দিল্লি পুলিশ ২৫টি এফআইআর দায়ের করেছে।

যে ৪০ জন কৃষক নেতা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তাঁদের মধ্যে ৩০ জনেরই নাম রয়েছে এই এফআইআর’এ। বলবীর সিং রাজেওয়াল, দর্শন পাল, রাকেশ টিকায়েতের নামও রয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিসও জারি করা হয়েছে। লালকেল্লার ঘটনায় দীপ সিধু ও লখবীর সিং সিধানার নামেও পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। কৃষক নেতারা বারংবার বলছেন, এই দু’জন পুলিশের মদতেই লালকেল্লায় পৌঁছে পতাকা তুলেছিল। কৃষক নেতাদের বিরুদ্ধে ‘দেশদ্রোহিতার’ মামলাও করতে চলেছে পুলিশ।

লেখক: অরূপ সেন, সদস্য, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপি আই) পশ্চিম বাংলা রাজ্য কমিটি

আগামীনিউজ/প্রভাত

 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে