কিছু একটা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তাগিদ ছিল চট্টগ্রামের পটিয়ার সোহাফ উদ্দিনের (৩১)। লেখাপড়া করেছেন মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। দারিদ্র্যের কারণে বাবার সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করতে হয়েছে তাকে। তবে দমে যাননি সোহাফ।
ছয় বছর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে উন্নত চাষাবাদের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পাশাপাশি শেখেন কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) তৈরির পদ্ধতি। এই কেঁচো সারই তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার রাস্তা দেখিয়েছে। এখন মাসে তিন টন করে কেঁচো সার তৈরি করছেন তিনি। দিয়েছেন সার ও বীজ বিক্রির প্রতিষ্ঠান।
পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব হাইদগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সোহাফ উদ্দিন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বাবার সঙ্গে ক্ষেতের কাজ শুরু করেন। অষ্টম শ্রেণির পর তার লেখাপড়ার পাট চুকে যায় চিরতরে।
২০১৫ সালে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি কৃষি প্রশিক্ষণে যোগ দেয়ার সুযোগ হয় তার। সেখানে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এরপর কেঁচো সার তৈরিতে পূর্ণ মনোযোগ দেন তিনি।
সোহাফ জানান, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে বাড়ির পাশে ১০০ টাকায় সামান্য জায়গা ভাড়া নেন। সেটির ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে ছোট একটি ঘরে তৈরি করেন। ঘরে বসান ছয়টি রিং। প্রতিটি রিংয়ে ১০০ থেকে ১২০ কেজি পচা গোবর, তরিতরকারির ফেলে দেয়া অংশ, পাকা কলার খোসা ও কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে পাওয়া ৫০০ গ্রাম কেঁচো। তা দিয়ে সার তৈরি শুরু করেন। এতে তার খরচ পড়ে মাত্র ৩০০ টাকা। ৪০ দিন পর প্রতিটি রিংয়ে ৪৫ কেজি করে কেঁচো সার তৈরি হয়। প্রতি কেজি কেঁচো সার বিক্রি হয় ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকায়। ফলে ছয়টি রিং থেকে উৎপাদিত কেঁচো সার বিক্রি করে তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। প্রতি তিন মাস অন্তর কেঁচোর বংশ বৃদ্ধি হয়। এ কারণে নতুন করে কেঁচো কিনতে হয় না।
তিনি আরো বলেন, কেঁচো সার তৈরিতে গরু-ছাগল অথবা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও নাড়িভুঁড়ির প্রয়োজন হয়। এসব তিনি ও তার স্ত্রী জোগাড় করেন। সোহাফ বলেন, সামান্য পুঁজিতে পরিশ্রমে ভালো লাভ হওয়ায় ২০১৮ সালে বাড়ির পাশে প্রতিবেশী খামারি আবু নঈমও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। এখন তার কাছ থেকে গোবর পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত। উৎপাদিত কেঁচো সার চট্টগ্রামের বিভিন্ন নার্সারি, বাগানি ও ছাদবাগানের উদ্যোক্তারা তার কাজ থেকে পাইকারি ও খুচরা মূল্যে নিয়ে যাচ্ছেন।
পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, কৃষকরা বিভিন্ন ফসলে রাসায়নিক সার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন। এতে জমির উর্বরতা শক্তি ও জৈবিক উপাদান কমে যাচ্ছে। যার ফলে ফলনও কমে যাচ্ছে। কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা হচ্ছে। উর্বরতাও বাড়ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে রাসায়নিকমুক্ত ফলন উৎপাদন হবে।
আগামী নিউজ/এসএম/এনএনআর