Dr. Neem on Daraz
Victory Day

এক আদম্য ইশাদের গল্প


আগামী নিউজ | বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৮:৫৭ এএম
এক আদম্য ইশাদের গল্প

ভোলাঃ দারিদ্র্যকে জয় করে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ইশাদ ইসলাম। বাবা চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী। সন্তানের পড়ার খরচ চালাতে রাতের বেলায়ও কাজ করতেন তিনি। নিজের মাথায় করে স্কুলের বেঞ্চ টানতেন তিনি।

এ বছর বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ইশাদ।

ইশাদের বাবা ইকবাল হোসেন ভোলার লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। লালমোহন পৌরসভার নয়ানিগ্রাম তাদের বাড়ি। ৩ মেয়ে ও এক ছেলে ইকবাল হোসেনের।

সন্তানদের কখনো অভাব বুঝতে দেননি তিনি। অত্যন্ত মেধাবী সন্তানরা তা বুঝতে পেরে ধার-দেনা করেও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন ইকবাল হোসেন। বড় মেয়ে ইশরাত জাহান ভোলা সরকারি কলেজে অনার্স পড়ে। মেজ মেয়ে আবিবারা এশা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট মেয়ে মহুয়া আক্তার পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। ইশাদ লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি ও ২০২০ সালে ভোলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে।

জীবনের কোনো পরীক্ষায় ফেল করেনি ইশাদ। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি প্রতিটি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পায় সে। পাশাপাশি পায় ট্যালেন্টপুল বৃত্তিও।

ইশাদ জানান, লক্ষ্য ছিল মেডিকেলে পড়বো। একজন চিকিৎসক হবো। আমার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমার পড়ার খরচ চালিয়েছেন। তাদের অনেক আশা ছিল আমাকে নিয়ে। তাই আমিও চেষ্টা করতাম। তাদের অর্থ যেন বিফলে না যায়। ঘুম, খাওয়া-দাওয়া এবং নামাজ ছাড়া দিনের বাকি সময়টকু পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করতাম। লকডাউনের পুরো এক বছর বাসায় পড়ালেখা করে কটিয়েছি। এইচএসসিতে অটো পাস দেয়ায় নিজের কাছে ভালো লাগলো না। তখন নিজেকে আরো বেশি প্রমাণ করতে পড়ালেখার গতি বাড়িয়ে দিলাম। যাতে কেউ অটোপাস নিয়ে কথা বলতে না পারে।

ইশাদের বাবা ইকবাল হোসেন জানান, স্কুলে গেলে আমি দাঁড়িয়ে থাকি কারন, আমি ছোট চাকুরি করি। আমি চাই আমার ছেলেমেয়েরা যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। আমি ইশাদের স্কুলে যাওয়ার সময় তার ব্যাগ কাঁধে করে বহন করতাম। ব্যাগের বইয়ের ওজন যেন তার কষ্ট না হয়। একদিন স্কুলে যেতে না পারলে সে কান্নাকাটি করতো। আমার সন্তানদের পড়ার খরচের জন্য রাতের বেলাও স্কুলের কাজ করেছি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি, জমিও বিক্রি করেছি। তবুও ওদের পড়ার খরচের অভাব বুঝতে দেইনি।

ইশাদের মা জানান, গভীর রাত পর্যন্ত ও পড়ালেখা করতো। আমি ওকে ঘুমাতে বললে ও বলতো ‘তোমাদের কষ্ট যেদিন সার্থক হবে সেদিন আমি ঘুমাবো’। ইশাদ নিজের সফলতার পেছনে বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা রয়েছে বলে জানান।

পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে ইশাদ বলেন, সবসময় সফলদের অনুসরণ করা উচিত। লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে সফল হওয়া যাবে। এই লক্ষ্যটাই একদিন জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।

অভাবিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার পরিকল্পনা ইশাদের।

আগামীনিউজ/জনী

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে