ঢাকাঃ আগের দিনই সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশ ৪-০ এর লক্ষ্যে মাঠে নামলেও তাদের সে আশা পূরণ হলো না। ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলেন না। পরে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসান দারুণ বোলিং করলেও সাকিব আল হাসান রান বিলালেন। তাই অস্ট্রেলিয়ার ঘাম ছুটিয়েও হার মানতে হলো বাংলাদেশকে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শনিবার ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম তিন ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ অবশ্য সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছে আগেই। অস্ট্রেলিয়ার এই জয়ের সুবাদে ব্যবধান ৩-১ হলো।
অবশ্য এই হারের জন্য আক্ষেপে পুড়তেই পারে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার মোক্ষম সুযোগ যে হাতছাড়া হলো। সোমবার পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। সেই ম্যাচও জিতে অস্ট্রেলিয়া ফল ৩-২ করতে চাইবে। বাংলাদেশ ৪-১ করতে পারে কি-না সেটিই এখন দেখার।
চতুর্থ টি-টুয়েন্টিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১০৪ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত ভার্সনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশ দলের সর্ব নি¤œ রানের রেকর্ড। জবাবে জয় পেতে ঘাম ঝড়াতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ১৯তম ওভারে স্বস্তির জয় পায় অসিরা।
সিরিজ জয় নিশ্চিত হবার পরও অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও সৌম্য সরকার। ৩ ওভারে ২২ রান তুলে ফেলেন তারা।
চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউডের বলে কভারে ক্যাচ দিয়ে থামেন সৌম্য। ১টি ছক্কায় ১০ বলে ৮ রান করেন তিনি। এই সিরিজে এটিই তার সর্বোচ্চ রান। আর উদ্বোধনী জুটিতে আজকের ২৪ রানই চলতি সিরিজে সর্বোচ্চ।
সৌম্যর বিদায়ের পর দলকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যান নাইম ও সাকিব। খুবই সর্তকতার সাথে খেলছিলেন তারা। ৯ ওভার শেষে দলের রান ছিলো ৪৩। রান রেট ৪ দশমিক ৭৭।
১০তম ওভারে ধীরলয়ে খেলা সাকিব আল হাসানকে ১৫ রানে থামিয়ে দেন হ্যাজেলউড। ২৬ বল খেলে ১টি চার মারেন সাকিব। এই জুটি থেকেও ২৪ রান পায় বাংলাদেশ। দু’জনে বল খেলেছেন ৩৮টি।
দলীয় ৪৮ রানে সাকিবের আউটের বাংলাদেশ ইনিংসে ধস নামান মিডিয়াম পেসার এন্ড্রু টাই ও দুই স্পিনার অ্যাস্টন আগার-মিচেল সুইপসন। ফলে ৩২ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এসময় অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ০, নুরুল হাসান ০, নাইম ২টি চারে ৩৬ বল খেলে ২৮ রানে সুইপসনের শিকার হন।
১৭ বলে ২০ রান করা আফিফ হোসেনকে থামান আগার। শামিম হোসেনকে ৩ রানের বেশি করতে দেননি সুইপসন।
৫১ রানে ৩ উইকেট থেকে ৮৩ রানে ৭ উইকেট পড়ে বাংলাদেশের। এতে শতরানের আগে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে টাইগাররা। কিন্তু সেটি হতে দেননি মাহেদি হাসান। শেষদিকে ১৬ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ রান করেন মাহেদি। এতে ৯ উইকেটে ১০৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ দুই বলে মাহেদি ও শরিফুলকে থামান টাই। অস্ট্রেলিয়ার টাই-সুইপসন ৩টি করে উইকেট নেন।
১০৫ রানের ছোট টার্গেট দিয়েও ইনিংসের প্রথম ওভারেই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। চতুর্থ ডেলিভারিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ২ রান করা ম্যাথু ওয়েডকে বোল্ড করেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মাহেদি হাসান।
এরপর ক্রিজে আসেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান। ঐ ওভারে মাহেদির শেষ দুই বলে ১টি চারে ৬ রান তুলেন ডান-হাতি ক্রিস্টিয়ান।
দ্বিতীয় ওভারে সাকিব ৫ রান দেন। তৃতীয় ওভারে নাসুম আহমেদ ১ রান দেন। তবে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাকিবের উপর ঝড় বইয়ে দেন ক্রিস্টিয়ান। ৫টি ছক্কা মারেন তিনি। ফলে ঐ ওভার থেকে ৩০ রান পায় অস্ট্রেলিয়া। ক্রিস্টিয়ান ঝড়ে ৪ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৪৫ রান তুলে অসিরা।
তবে পরের দুই ওভারে হতাশায় পুড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। পঞ্চম ওভারে বেন ম্যাকডারমটকে বিদায় দেন নাসুম। ৫ রান করেন তিনি।
চতুর্থ ওভারে ক্রিস্টিয়ানের ঝড় দেখে, ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবারের মত মুস্তাফিজুর রহমানকে আক্রমনে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। বাজিমাত করেন ফিজ। দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই মারমুখী ক্রিস্টিয়ানকে আউট করেন মুস্তাফিজ। ৫টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৫ বলে ৩৯ রান করেন ক্রিস্টিয়ান। ওভারটি উইকেট মেডেন ছিলো ইনফর্ম মুস্তাফিজের।
দলীয় ৪৯ রানে ক্রিস্টিয়ানকে ফিরিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে বাংলাদেশের বোলাররা। ৫ রানের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেটে পতন ঘটিয়ে দারুনভাবে লড়াইয়ে টিকে থাকে বাংলাদেশ। মইসেস হেনরিক্স ৪ রান করে রান আউট, অ্যালেক্স ক্যারি ১ রান করে মুস্তাফিজের এবং মিচেল মার্শ ১১ রান করে মাহেদির শিকার হন।
৬৫ রানে ৬ উইকেট পতনে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য ৫৮ বলে ৪০ রানের প্রয়োজন পড়ে অসিদের। এরপর সপ্তম উইকেটে ৪৩ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ে পথে নিয়ে যান অ্যাস্টন টার্নার ও অ্যাস্টন আগার। এই জুটিতে ২৭ রানই ছিলো আগারের।
১৮তম ওভারে আগারকে শিকার করে এই জুটি ভাঙ্গেন শরিফুল। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৭ বলে ২৭ রান করেন আগার। এরপর বাকী ৬ রান তুলেছেন টার্নার ও টাই। টার্নার ৯ ও টাই ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের মাহেদি-মুস্তাফিজ ২টি করে উইকেট নেন।
আগামী ৯ আগস্ট এই ভেন্যুতেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টুয়েন্টি।