ছবি সংগৃহীত
ঢাকা : চাকুরি অথবা পড়াশোনা সুবাদে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অগনিত বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই ক্রীড়ায় নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কেউ ফুটবলে, কেউ ক্রিকেটে অথবা অন্য কোনো খেলায়। তাদেরই একজন রুখসানা বেগম। যার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটের বালাগঞ্জে। তবে বাবা মায়ের সাথে তিনি থাকেন ইংল্যান্ডে।
লন্ডনের সেভেন কিংস এলাকায় বসবাস করেন রুখসানা বেগম। বাবা আওলাদ আলী এবং মা মিনারা বেগম দম্পতির তিন ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে রুকসানা দ্বিতীয়। ২০০৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনিস্টার থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন রুকসানা। ১৬ বছর বয়সে রুকসানা সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রুকসানা গত চার বছর ধরে নিজের দখলে রেখেছেন ব্রিটিশ কিক বক্সিং ও মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়নের শিরোপা। চলতি বছরেরও পঞ্চমবারের মতো মুয়ে থাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের সম্মান অর্জন করেন রুকসানা। এই প্রতিযোগিতায় সুইডেনের সুজানা স্যালমিজার্ভিকে পরাজিত করতে হয়েছিল তাকে। এর আগে রুকসানাকে ধাপে ধাপে বিশ্বের সেরা ১০ নারী বক্সারকে পরাস্ত করতে হয়। কিক বক্সিং কঠোর শারীরিক কসরতনির্ভর একটি খেলা। এই খেলায় পর পর পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন রুকসানা।
১৭ বছর বয়সে ব্রিটেনের একটি ব্যায়ামাগারে ভর্তি হন রুকসানা। শরীরচর্চা করতে গিয়ে শখের বশে শুরু করেন বক্সিং প্রশিক্ষণ। লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকার সেই ব্যায়ামাগারে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, খ্যাতনামা প্রশিক্ষক বিল জাডের কাছে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী মুয়ে থাই শেখার সুযোগ পান রুকসানা। শখের বশে যে খেলা শুরু করলেন, সেটিই হয়ে উঠল তার ধ্যান-জ্ঞান। তবে এই বিষয়টি পরিবারের কাছে গোপন রেখেছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে রুকসানার প্রথম সাফল্য আসে। ব্রিটেন জাতীয় দলের হয়ে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে আলোচনায় আসেন তিনি। তখন থেকেই স্বপ্নের পরিধি কেবল বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে রুকসানা লাটভিয়ায় আয়োজিত ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপে সোনা জেতেন। একই বছর তিনি পান মুসলিম ওম্যান ইন স্পোর্টস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড। পরের বছর রুকসানা নির্বাচিত হন ‘এশিয়ান অ্যাচিভার স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার’।
লন্ডন অলিম্পিকের মশাল হাতেও ছুটেছেন তিনি। ফাইট ফর পিস দাতব্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন রুকসানা। জড়িয়ে আছেন আরও নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে। গেল বছরের মতো এ বছরের এপ্রিলেও মুয়ে থাই খেলায় নামলেন। রীতিমতো তার চোখে-মুখে যেন আগুন ঝরছিল। প্রতিপক্ষ ছিলেন সুইডিশ চ্যাম্পিয়ন সুজানা স্যালমিজার্ভি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। উচ্চমাত্রার বক্সিং খেলায় পাঁচ রাউন্ডের প্রতিটিতে হারিয়ে মুয়ে থাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন খেতাব অর্জন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বক্সিংকন্যা রুকসানা বেগম।
আগামীনিউজ/জেডআই