ঢাকাঃ স্বাধীনতার আগে-পরে দেশের মানুষ সরিষা তেলের ওপর প্রায় নির্ভরশীল ছিল। নিজেদের উৎপাদিত সরিষা তেল দিয়েই রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সব খাবার আয়োজন হতো। শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, এই তেল ব্যবহার করা হয় আরও অনেক কাজে। ত্বক ও চুলের যত্নেও সরিষার তেলের ব্যবহার করেন অনেকে।
তবে এখন আর আগের মতো তেলির ঘানির তেল পাওয়া যায়না হাট-বাজারে। বাধ্য হয়ে বোতলের তেল কিনছেন ক্রেতারা। বাজারে যেসব তেল পাওয়া যায় সেটা খাঁটি নাকি ভেজাল সে সম্পর্কে ধারণা থাকে না ক্রেতাদের।
বাজারে যেসব খাটি সরিষার তেল বলে চালানো হচ্ছে সেগুলাতে কি আদৌ সরিষা থাকে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ক্রেতাদের।
বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত ভেজাল তেলকে আসল সরিষার তেল ভেবে রান্নায় ব্যবহার করে অগণিত মানুষ প্রতিনিয়িত গ্যাস্ট্রিকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল তেল জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা মোটর চালিত ঘানি মেইলগুলোতে ভাঙ্গানো হচ্ছে সরিষা। এসব সরিষার তেলে ভেজাল মিশিয়ে বিভিন্ন হাট বাজারের মুদি দোকানগুলোতে সর্বরাহ করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
সরিষা থেকে তেল বোতলজাত নিয়ে এক পরিসংখ্যান করে দেখা গেছে, বাজারে এক মণ (৪০কেজি) সরিসার দাম ৩৮০০ টাকা। এক মণ সরিষা থেকে ময়লা মাটি ও নষ্ট দানা বাছাই করে কমে যায় ৩ কেজি। এক মণ সরিষা হয়ে গেল ৩৭ কেজি।
আর ৩৭কেজি থেকে তেল পাওয়া যাবে ১২ লিটার। আর খৈল হয় ২৭ কেজি। এক কেজি খৈলের দাম ৪০ টাকা। সুতরাং ২৭ কেজি খৈল বিক্রি করা যাবে ১০৮০ টাকা।
এক মণ সরিষার দাম ৩৮০০ টাকা থেকে খৈল বিক্রির ১০৮০ টাকা বাদ দিলে থাকে ২৭২০ টাকা। এদিকে সরিষা ভাঙ্গানোর মিস্ত্রি খরচ ৬০০ টাকা এবং বোতল ও ক্যাপের দাম ১২ টাকা দিয়ে এক সরিষায় খরচ পড়ে যায় ৩৩৩২ টাকা। ১ লিটার সরিষার তেল ২০৬ টাকা বিক্রি হলে এবং এক মণ সরিষা থেকে প্রাপ্ত ১২ লিটার তেল বিক্রি হবে ২৮৭২ টাকা।
সুতরাং এক মণ সরিষা থেকে প্রাপ্ত ১২ লিটার তেল পেতে খরচ হলো ৩৩৩২ টাকা এবং সেই তেল বিক্রি হলো ২৮৭২ টাকায়। এতে ক্ষতি ৮৬০টাকা।
তাহলে বাজারে যেসব সরিষার তেল বোতলে পাওয়া যায় আসলে সেসব তেল কিভাবে লোকসান দিয়ে বাজারজাত করছেন ব্যবসায়ীরা তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন।
দোকানগুলোতে থাকা তেলগুলো ভেজাল কিনা সেটা জানার কোন উপায় নেই। দোকানদারদের কথায় বিশ্বাস করেই এসব তেল কিনে নিচ্ছে মানুষ। ছোট ছোট মিল গুলোতে নোংরা পরিবেশে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে। ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার করা হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
বর্তমানে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অনেক বেশি। খাঁটি মানের তেল আর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে অনেকে সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ভোক্তাদের এই চাহিদার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সরিষার তেলে ভেজাল করে বাজারজাত করছেন। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও ক্রেতারা হচ্ছেন প্রতারিত।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, জেলা পর্যায়ে ভেজাল ভোজ্য তেল পরিক্ষা- নিরিক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা সরিষার তেলে ভেজাল মিশাচ্ছেন। ভেজাল প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার মনিটরিং জোরদার খুবই জরুরি। ভোজ্য তেলে ভেজাল রোধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন । এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন স্থানীয় সচেতন ভোক্তা সাধারণ।
এসএস