নারায়নগঞ্জঃ জেলার রূপগঞ্জে নাপা প্যারাসিটামলসহ ঠান্ডাকাশি জ্বর ও শ্বাস কষ্টের ওষুধের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তিতে আছেন রোগীরা। অন্যদিকে ওষুধের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে ফার্মেসীগুলো। উপজেলার ফার্মেসীগুলোতে ওষুধ না পেয়ে দুরদুরান্তে ছুটছেন মানুষ। এতে পরিবহন সঙ্কটের পাশাপাশি করোনায় আক্রান্তের ভয়ও পাচ্ছেন ভোক্তভুগিরা। তারপরও স্বজনদের রক্ষার্থে ছুটছেন মানুষ।
সরজমিনে দেখা যায়, মুড়াপাড়া বাজারের একটি ওষুধের দোকানে ডালিম মিয়া গিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, নাপা এক্সটেন্ড, ফেক্সো, উইনডাল প্লাস আছে কি না। দোকানীর উত্তর নাই নাই। কেন নাই জানতে চাইলে বলেন, ওষুধ আসে না। কেন আসে না জানতে চাইলে ওই দোকানী বলেন, করোনা সঙ্ক্রমণের ভয়ে অনেক এসআর আসে না। আবার অনেক কোম্পানী থেকেই ওষুধ আসে না। সবখানেই সঙ্কট রয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালের ফার্মেসী ও হাটবাজারের ওষুধের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র সবখানে। সব জায়গাতেই শুধু নাই আর নাই। ওষুধ না পেয়ে মানুষ হণ্যে হয়ে ছুটছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। অনেকে নিরুপায় হয়ে উপজেলার বাহিরে গিয়েও ওষুধ সংগ্রহের চেষ্ঠা করছেন। সরকারী বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগীর অভাব নাই। কোনো হাসপাতালেই বেড খালি নাই। ওষুধপত্রে যোগান নাই। সর্বত্রই যেন হাহাকার চলছে। ওষুধের জন্য দিগবিদিক ছুটতে গিয়ে মানুষ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারাও যাচ্ছেন। এদিকে করোনা পরীক্ষা একমাত্র গাজী পিসিআর ল্যাবটিও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু দিন যাবৎ।
ডাঃ মেহেদী হাসান বলেন, এখন বর্ষাকাল। রৌদবৃষ্টির খেলা চলে আকাশে। বছরের এ সময়টায় সর্দিকাশির জনিত রোগে আক্রান্ত হয় বেশি মানুষ। তাছাড়া করোনা মহামারী তো রয়েছেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ ফয়সাল আহমেদ বলেন, রোগী আসছে প্রতিনিয়ত। সর্দিকাশি জ্বরের রোগিই বেশি। আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লোকবল সঙ্কট রয়েছে। রোগি সামাল দিয়ে আমরাও হিমশিম খাচ্ছি। রোগির সংখ্যা অনেক বেশি। তাই ওষুধের সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক।
রূপগঞ্জের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ঠান্ডা-জ্বরসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাড়িতে সেবা নেয়ায় বাজার থেকে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত দুই মাসে উপজেলায় করোনা উপসর্গে ও আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৮ জন মারা গেছেন। উপজেলার এমন কোনো বাড়ি নেই যেই পরিবারের কোনো সদস্য জ্বর, ঠান্ডা, খুসখুসে কাশিতে আক্রান্ত নয়। একমাত্র পিসিআর টেস্ট ল্যাব বন্ধ থাকায় ইচ্ছা থাকলেও টেস্ট করাতে পারছেন না অনেকে। সংক্রমণের ভয়ে বাড়িতেই ঘরোয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই না থাকায় উপজেলার বাজার থেকে অনেকটা উধাও এসব ওষুধ।
উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার ব্যবসায়ী সোহেল মাহমুদ জানান, বাড়ির সবার ঠান্ডা লেগেছে। সাথে জ্বরও আছে। তাই প্যারাসিটামল কিনতে এসেছিলাম। কোনো ফার্মেসিতে পাইনি। লোকনাথ ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা আব্দুর রহমান নামে একজন জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্যোগময় সময়ে যদি ওষুধ পাওয়া না যায় তাহলে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
নূপুর মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক জাহিদ হোসেন জানান, বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল আছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ ছাড়া অন্যগুলো মানুষ খাচ্ছে না। এ কারণেই ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সহ-সভাপতি ও দেওয়ান
ফার্মেসির মালিক ডাক্তার কামাল দেওয়ান জানান, রূপগঞ্জে লাইসেন্সধারী ২ শতাধিক ফার্মেসি রয়েছে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি আছে আরও চার শতাধিক। খোঁজ নিলে দেখা যাবে কমবেশি সব দোকানেই এই ওষুধের সংকট চলছে। কোম্পানি না দিলে আমরা বিক্রি করবো কীভাবে। কোম্পানির লোকের কাছে চাইলে বলে সাপ্লাই নেই।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরজাহান আরা জানান, সরকারি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ রয়েছে। কোনো সংকট নেই। তবে করোনার অন্যান্য উপসর্গ থাকলে অবশ্যই তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। করোনা ছাড়াও এ সময়টায় মানুষের ডেঙ্গু, সর্দি, কাশি, জ্বর লেগেই থাকে। আতঙ্কিত হলে চলবে না। সচেতন হতে হবে। শাক সবজি দেশি ফল মুল বেশি করে খেতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা গ্রহন করতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।