গাইবান্ধাঃ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় অবস্থিত ‘জামালপুর শাহী মসজিদ’ নামের এই মসজিদটি কবে, কখন নির্মিত হয়েছে, সেটি কেইউ জানেন না। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৭শ বছর আগে নির্মিত হতে পারে। অনেকের কাছে গায়েবি মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রাচীনতম এই মসজিদটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে অক্ষত অবস্থায়।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সকালে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বড় জামালপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেলো মসজিদটির নানাবিধ তথ্য। ওই গ্রামের জামালপুর সিনিয়র মাদ্রাসা চত্বর সামনে মসজিদটি অবস্থিত। আর এই মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে পীরে কামেল হজরত শাহ জামাল (রহ.)-এর মাজার শরীফও দক্ষিণ পাশে হজরত শাহ জামাল (রহ.) এতিম খানা।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, বিগত ৬০ দশকের প্রথম দিকে গাইবান্ধা মহকুমা প্রশাসক হক্কানি কুতুবউদ্দিন নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় লোকদের কাছে মসজিদটির ইতিকথা শোনেন। লোকজনের কথা শুনে তিনি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মসজিদটি অনুসন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু মসজিদটির জায়গায় বিশাল বটগাছ গজিয়ে ওঠায় মসজিদটি বটবৃক্ষের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড ঝড়ে বটগাছটি ভেঙে পড়ে। এরপর স্থানীয় লোকজন মসজিদটি দেখতে পায়। সেই থেকে মানুষ মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে অবহিত করতে থাকে।
আরো জানা যায়, মসজিদটি উদ্ধারের কিছুদিন পর সিলেটের কামেল ব্যক্তি হজরত শাহ্ জামাল (রহ.) স্বপরিবারে এ এলাকায় আগমন করেন। তিনি মসজিদটি দেখাশুনা শুরু করেন। সেই থেকে মসজিদটির নামকরণ হয় জামালপুর শাহী মসজিদ।
এদিকে, লোকমুখে প্রচলিত আছে, তৎকালীন সময়ে সৈয়দ ভোম আলী ভারতের শিলিকুড়ি থেকে সুলতান মাহমুদের আমলে হজরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিশতির নির্দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এই এলাকায় এসে হজরত শাহ জামালের সঙ্গে মিলিত হন। সম্ভবতঃ তারাই এই মসজিদ নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ হিসেবে মসজিদটি প্রায় ৭০০ বছর আগে নির্মিত হতে পারে।
স্থানীয় কয়েকজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি বলেন, প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষরা মসজিদে মান্নতের নগদ টাকা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, চাল ও মিষ্টি নিয়ে আসেন এবং পোলাও করে শিন্নি বিতরণ করেন এখানে। যে কেউ যে কোনো নিয়তে মান্নত করলে আল্লাহর অশেষ রহমতে তা পূরণ হয় বলে জানান তারা।
মসজিদটির ইমাম মো. আবদুল হালিম জানান, মসজিদটি বাহির থেকে অনেক বড় মনে হলেও তৎকালীন মূল মসজিদের ভেতরে শুধুমাত্র দুই কাতারে ৬০ জন মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায় করা যায়। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এলাকার লোকজন মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে সংযুক্ত মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়েছ।
জামালপুর শাহী মসজিদ কমিটির সভাপতি খন্দকার আব্দুল্যাহেল আল মামুন জানান, ধর্মপ্রাণ মানুষের সাহায্য-সহযোহিতা ও মান্নতের অর্থ দিয়ে মসজিদ পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, মসজিদের ৩য় তলার কাজ চলমান রয়েছে। এ তলাটি সম্পন্ন হলে প্রায় আটশ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এখনও মসজিদ উন্নয়নে অনেক কাজ বাকি রয়েছে কিন্তু টাকার অভাবে সেগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আগামীনিউজ/জনী