উত্তরাঞ্চলঃ উত্তরাঞ্চলে কঠোর লকডাউনে দিনমজুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কমপক্ষে ১০ গুণ ভিক্ষারির সংখ্যা বেড়েছে। লকডাউনের আগে ভিক্ষারির দেখা মিলতো বৃহস্পতিবার। এখন প্রতিদিন নজরে পড়ছে। ভিক্ষাবৃত্তিতে বেশি যোগ হয়েছে হোটেল, রেস্তোরা ও ম্যাচে কাজ করা মহিলারা। আর যেসব পুরুষ হোটেলে কাজ করতো তারাও জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিতে যুক্ত হয়েছে। ভিক্ষারির খাতায় যুক্ত হওয়া নতুন ভিক্ষারিরা নিজ উপজেলা কিংবা নিজ কর্মস্থলের বাইরে ভিক্ষা করছেন।
বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এলাকার যেসব মহিলা শিক্ষার্থীদের ম্যাচে কাজ করতো তারাই পেটের ক্ষুধা নিবারনের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি পেশা বেচে নিয়েছে। রংপুরের কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর পলিটেনিক্যাল ইন্সটিটিউট, রংপুর সরকারি কলেজ, রংপুর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট ঘিরে ওইসব এলাকায় শতশত প্রাইভেট ছাত্রাবাস চালু ছিলো। এসব ছাত্রাবাসে রান্নার কাজে জড়িত থাকতো কয়েক হাজার মহিলা।
এদিকে শহরের বড় বড় হোটেলগুলোতেও মহিলা ও পুরুষরা কাজ করতো। অনেক মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো করোনার বিস্তার রোধে কাজের বুয়াদের কাজ থেকে সাময়িক বাদ রেখেছেন। এসব ভাস্যমান কর্মজীবী মহিলা ও পুরুষরা পেট ও পরিবার বাঁচানোর তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছে। অনেকের আচরণে ভদ্রতার ছাপ থাকলেও জটরের ক্ষুধা নিবারণ করতে হাত পাততে বাধ্য হয়েছে। কঠোর লকডাউনের কারণে ওষুধের দোকান, সারের দোকান, কাঁচা সবজি বাজার খোলা থাকায় এসব দোকানেই ভিক্ষারিদের দেখা মিলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫০ বছর বয়সি রংপুরের এক মহিলার সঙ্গে কথা হয় সৈয়দপুরের এক ওষুধের দোকানে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে গুটিশুটি মেরে থাকলেও অনেক অনুরোধের পর তিনি মুখ খুলেন। ওই মহিলা আগামী নিউজকে বলেন, আগে ছাত্রীদের এক ম্যাচে কাজ করতেন। সেখানে তিনবেলা খাবারসহ মাস শেষে বেশ ভালো টাকাও মিলতো। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা সবাই বাড়ি গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ম্যাচ। হাতে যা অর্থ ছিলো তা দিয়ে কিছুদিন দুই সন্তান নিয়ে কোনরকমে জীবন চালিয়েছেন। কিছুদিন দোকান থেকে ধারদেনা করে উদর পূর্তি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে ধারের পরিমান এমন বেড়ে গেছে তা পরিশোধ করার মতো কোন সামর্থ নেই। পাওনাদাররাও পাওনা আদায়ে চাপ দিচ্ছেন। অবশেষে তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছেন। সারাদিন ভিক্ষা করে ১০০ টাকাও হয় না। রাতের বেলা স্টেশনে ঘুমান। ৭ দিন বা ১০ দিন পরে বাড়িতে যান সেই ভিক্ষা করা টাকা নিয়ে। তা দিয়েই সন্তানদের মুখে খাবার জোটানোর চেষ্টা করছেন। বর্তমান সময়ে শহরের ধনীরাও ভিক্ষা দিতে চান না। তাদের বাড়ির গেটের দরজা সবসময় বন্ধ থাকে। কলিংবেল বাজলেও বাড়ির কর্তা নিচে নেমে এসে বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেয়। এমন অবস্থায় জীবন বাঁচানো দুস্কর হয়ে পড়েছে।
ষাটার্ধো আব্দুর রহিম একটি নামকরা হোটেলে থালা বাসন মাজার কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে হোটেল মালিক দোকান বন্ধ রেখেছে। পেটের তাগিদে অন্যের কাছে হাত পাততে শুরু করেছেন। এর মধ্যে কেউবা দেয় আর অনেকেই কটু কথা বলে তাড়িয়ে দেয়। তার কথা এমন জীবনের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। কিন্তু সন্তানদের মুখ চেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন।
একই ধরনের কথা বলেন, রাহেলা, আকলিমা, মোছা. বেগম, মঞ্জুআরা, শরিফ, আকরামসহ অগনিত ভিক্ষুক। তারা আগামী নিউজকে বলেন, কর্ম করে জীবন চালাতে চান। ভিক্ষার হাতকে কর্মে পরিণত করতে চান। কিন্তু কর্মের সুযোগ নেই। তাই ভাতের তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য পেশায় নেমেছেন। তাদের মতে, এমন অবস্থা থেকে তারা পরিত্রাণ চান। সরকারের কাছে বেঁচে থাকার জন্য তারা বিকল্প পথ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন। তাদের সাফ কথা এমন কর্মের হাত দিয়ে তারা সারাদিন কর্ম করেই পেটে খাবার দিবেন। এক কথায় তারা কাজ চাইছেন ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে। ওইসব মানুষের এমন আকুতির কথা শুনে সমাজ সচেতন মানুষরাও কর্মহীন সাধারণ মানুষদের বেঁচে থাকার স্বার্থে সরকারের নেক দৃষ্টি কামনা করেছেন।
আগামীনিউজ/জনী