চাঁদপুরঃ চাঁদপুরে মেশিনে তৈরি মুড়ির চেয়ে হাতে ভাজা মুড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। তাই রমজান কে ঘিরে হাতে ভাজা মুড়ি কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে রমজান মাস বাদে বছরের অন্য সময়ে বিশেষ দিন বা অনুষ্ঠান ছাড়া হাতে ভাজা মুড়ি কারিগররা অনেকটা অবসরই সময় কাটান।
১৯ই এপ্রিল সোমবার এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বিভিন্ন স্থানের হাতে তৈরি মুড়ি কারিগররা জানিয়েছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ডের পালকান্দি, হাজীগঞ্জের উচঙ্গা, কচুয়ার কাদলা গ্রামসহ বেশ কিছু স্থানে হাতে ভাজা মুড়ি কারিগররা মুড়ি ভাজতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।তারা বংশ পরম্পরায় এ ব্যবসায় রয়েছেন। অনেকটা অলাভজনক হলেও ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসা সমাজের প্রয়োজনেই যেন তারা টিকিয়ে রেখেছেন।আর এভাবে হাতে তৈরি মুড়ি ভাজার কারিগররা বেশির ভাগই সনাতন ধর্মালম্বিদের পাল বংশের অনুসারী।
বেশ কয়েকজন হাতে ভাজা মুড়ি কারিগররা জানান, মুড়ি ভাজতে হলে চাউল গ্রাহক কে নিয়ে যেতে হয়। তখন কেজি প্রতি ২০ টাকা করে তারা মুড়ি ভাজার পারিশ্রমিক নেন। প্রতি কেজি মুড়ি ভাজতে তাদের ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়। সকালে বা সন্ধ্যার পর মুড়ি ভাজার গ্রাহক সমাগম বেশি থাকে।
কচুয়ার কাদলা গ্রামের পাল বাড়ির বিমল পাল, শ্যামল পাল, যুবরাজ, অমর পাল ও অজয় পাল জানান, আমরা বাপ-দাদার ঐতিহ্যগত পেশা হিসেবে মুড়ি ভাজার কাজে আছি। বালু লাগলেও এতে সহায়ক হিসেবে লবন, মাটির চুলা, লাকরি ও মাটির কড়াইয়ে মুড়ি ভাজা হয়। হতে ভাজা মুড়ি ১’শ ১০ থেকে ১’শ ২০ টাকা দামে বিক্রি করি।ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবং আধুনিক মেশিনে মুড়ি ভাজায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এ পেশায় তাই আগের মতো চাহিদা না থাকায় অনেকেই বংশগত এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
কাদলা পাল বাড়ির দিলিপ পাল, বিষ্ণু পদ পাল জানান, মুড়ি ভাজার কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি। বাপ-দাদার ঐতিহ্যগত এ পেশা বদল করতে চাইলেও পারছি না। তবে মুড়ি বিক্রির তেমন কোন আদর্শ বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় আয় রোজগারে অনেক ভোগান্তিতে রয়েছি। এক মন ধান ১৭’শ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। কিন্তু এই ধান থেকে তৈরিকৃত হাতে ভাজা মুড়ির চেয়ে মানুষ মেশিনে তৈরি মুড়ির প্রতি আকৃষ্ট। যেজন্য এ পেশায় আমাদের এখন আর পোষায় না। আমরা যদিও বাপ দাদার ঐতিহ্য পেশা ধরে রেখেছি। কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্ম অর্থাৎ আমাদের ছেলে-মেয়েরা এ পেশায় থাকবে না। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণ সহায়তা পেলে এ পেশাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করছি।
এ ব্যপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ বলেন, হাতে ভাজা মুড়ি কারিগরা যদি আমাদের সহায়তা চায়। তাহলে আমরা তাদের সাথে কথা বলে অবশ্যই সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
আগামীনিউজ/জনী