ঢাকাঃ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া মৎস্য আড়তে বড় বড় মাছের যেন মেলা বসছে। ইলিশ, পাঙ্গাশ, আইড়, বোয়ালে ভরে গেছে। পদ্মাতীরের আড়ৎটিতে বড় ইলিশ ও পাঙ্গা মাছের যেন সমারোহ।
পদ্মাপাড়ে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতেও ভোরেই জমজমাট থাকে মাওয়া মৎস্য আড়ত। বড় বড় ইলিশের সঙ্গে পাঙ্গাশের পসরা চোখে লাগার মতো। এছাড়াও হরেক রকম তাজা মাছে ভরে যায় বাজার। ঠিক একই ভাবে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট বাজারে চলে মাছের পসরা। মাছ ব্যবসায়ী, ক্রেতা সবাই খুব ভোরে এখানে চলে আসে মাছ কিনতে। ক্রেতাদের প্রধান টার্গেট পদ্মার ইলিশ ও পাঙ্গাশ।
ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্মার ইলিশ ও বড় বড় পাঙ্গাশে ভরে উঠেছে জেলেদের জাল। অর্থনীতিতেও এর প্রভাব বিস্তর। তবে দিনে দিনে যেন কমতেই থাকছে পদ্মার ইলিশ আর পাঙ্গাশের স্বাদ। ক্রমেই যেন হারাতে বসেছে ইলিশ ও পাঙ্গাশ তার সুস্বাদু স্বাদ।
পদ্মার পাঙ্গাশে আগের মত স্বাদ পাচ্ছেন কি'না জানতে চাইলে গোয়ালন্দ ঘাট মাছ বাজারে পাঙ্গাশ কিনতে আসা মোঃ মারুফ মিয়া (৬২) আগামী নিউজকে বলেন, সাড়ে ছয় কেজি ওজনের পাঙ্গাশ কিনেছি। তবে এই পাঙ্গাশের ১০/১২ বছর আগেও যে স্বাদ ছিল তার ছিটেফুটো নাই এখন। কিন্তু আমাদের আর কি করার এটাই কিনতে হয়।
একই বাজারে ইলিশ কিনতে আসা রহমান মিয়া (৫৩) আগামী নিউজকে জানান, এই দেখেন ইলিশ ওজন আড়াই কেজি অথচ আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ বাসায় রান্না করলে তিন চার বাড়ী থেকে তার গন্ধ পাওয়া যেত আর এত বড় ইলিশ রান্না করলেও পাশের রুম থেকেও বোঝা যায়না ইলিশ রান্না করছি না অন্য কিছু।
পদ্মা নদীতে মাছ ধরা কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়ীয়ার জেলে ইশহাক মাঝি জানান, ইলিশ ধরি আর ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি প্রায় ৪০ বছর। এই ৪০ বছরে ইলিশের স্বাদের কথা চিন্তা করলে পার্থ্যকই করতে পারিনা। আজকের ইলিশের আর আগের ইলিশ ভাবাই মুশকিল। একটা ইলিশ রান্না হলে রাস্তার মানুষ বলতে বলতে যেত যে এই বাড়ীতে ইলিশ রান্না হচ্ছে কিন্তু আজ ঘরের মানুষই জানে না যে বাড়ীতে ইলিশ রান্না হচ্ছে কি'না অন্য মাছ।
তবে পদ্মার ইলিশ ও পাঙ্গাশের স্বাদ আগের মত নেই এই কথা মানতে নারাজ মৎস্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পরিচালক মাসুদ আরা মিমি আগামী নিউজকে বলেন, "আপনি ইলিশ ও পাঙ্গাশের স্বাদ কেন পাচ্ছেন না আমি তো জানি না। কিন্তু আমি তো পাচ্ছি। আমার কাছে সব ইলিশ ও পাঙ্গাশের স্বাদ আছে। আগের মত স্বাদ বলতে কোন আগের কথা বলছেন তা তো আমি বলতে পারবো না। আমি আসলে সিজনের জিনিস সবটারই স্বাদ বুঝি।সিজনাল জিনিসের সিজনাল স্বাদ পাবেন। লাইফ সাইকেলের এক একটা সময় ইলিশের এক এক রকম স্বাদ হয়। এই সময়টায় ইলিশের স্বাদ পাওয়া যায়। স্বাদ পাচ্ছি না কথাটা ঠিক না। এক একটা জায়গার ইলিশের স্বাদ এক এক রকম। সমুদ্রের ইলিশটা নদীর ইলিশ থেকে কম স্বাদের হয়। কিন্তু, তার অর্থ এই না যে স্বাদ পাচ্ছি না।ইলিশের হ্যাভিটটা লক্ষ্য করেন। তার হ্যাভিটের উপর নির্ভর করে তার স্বাদ। তার খাবার, স্যালাইনিটি হেরফের হওয়াতে স্বাদ ভিন্ন হয়। সমুদ্র থেকে নদীতে আসলে মাছ টেস্টি হয়। সমুদ্র থেকে নদীতে যখন ডিম ছাড়ার জন্য আসে, তখন আস্তে আস্তে যখন ফ্যাট জমে তখন মাছে স্বাদ আসতে থাকে। ফুল ডিম আসার আগে যখন এডাল্ট অবস্থায় থাকে তখন স্বাদ আসে। মৌসুম ভেদে পাঙ্গাশেরও স্বাদ পরিবর্তন হচ্ছে।
তবে গবেষণা বলছে, ইলিশের স্বাদ তার পরিভ্রমণ কাল ও অভিপ্রয়াণ দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভরশীল। নদী বেয়ে এরা যত ওপরে ওঠে, তত বেশি মনো-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড পলি-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডে পরিবর্তিত হয়, তত বেশি এদের দেহস্থিত দুর্গন্ধ স্বাদু পানিতে ডায়ালিসিস হয়ে বের হয়ে যায়। আর তাতে ইলিশের স্বাদ তত বেড়ে যায়।
দিন দিন নদী দুষণ যেভাবে বাড়ছে তার ফলে নদী বেয়ে এরা উপরে উঠতে পারছে না। যেহেতু ইলিশের স্বাদ তার পরিভ্রমণ কাল ও অভিপ্রয়াণ দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভরশীল সেহেতু দূষণের ফলে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে না পারায় এর স্বাদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আর এই দূষণের কারণেই পদ্মার পাঙ্গাশের স্বাদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
আগামীনিউজ/এএইচ