Dr. Neem on Daraz
Victory Day

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৪:৫৫ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ ‘সরকারের ধারাবাহিকতায় গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। শেখ হাসিনা টানা একযুগ প্রধানমন্ত্রী থাকায় এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।’

দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণে অর্জিত হয়েছে দৃশ্যমান সফলতা। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ্বনন্দিত।’

একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্য। পাট রফতানিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে প্রথম, ইলিশে প্রথম, তৈরি পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয়, অন্যান্য ক্ষেত্রসহ চাল উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় রেখে চলছে অনবদ্য অবদান। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অতীতের অবিশ্বাসের কৃত্রিম দেয়াল ভেঙে নির্মিত হয়েছে সম্পর্কের নতুন সেতুবন্ধন। সমাধান হয়েছে দীর্ঘদিনের ছিটমহল বিনিময় কার্যক্রম।’

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামাজিক এবং যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে যোগাযোগ খাতে রীতিমতো বিপ্লব হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ি প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, বছরের প্রথমদিনে পাঠ্যপুস্তক উৎসব প্রধানমন্ত্রীর অবদান। শেখ হাসিনার হাত ধরেই মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণাধীন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। তার হাত ধরেই দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’

‘যতক্ষণ শেখ হাসিনা জনমানুষের পাশে আছেন ততক্ষণ কোনও অপশক্তিই দেশকে পিছিয়ে দিতে পারবে না। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

পদ্মা সেতু:

স্বপ্ন সত্যি হলো। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ২২ টি জেলার প্রায় ৭ কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মাসেতু। পদ্মা সেতুর ৪১ তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো ৬ হাজার ১৫০ মিটার পদ্মাসেতু। তৈরি হলো দুই পাড়ের মানুষের সেতুবন্ধন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বিজয়ের মাসে বাঙালি জাতির আরেকটি ঐতিহাসিক বিজয়।

রেলপথে সাফল্য:
স্বল্প মূল্যে পণ্য ও জন পরিবহন নিশ্চিত করতে সারাদেশে শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে সরকার দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

২০০৯ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার গুরুত্ব দেয় দীর্ঘদিনের অবহেলিত রেলপথে। ভারতের ঋণে আনা হয়েছে ইঞ্জিন, কোচ। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন রেলপথ।  রেলপথ উন্নয়নে ২০১৬-২০৪৫ মেয়াদে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টার প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। রেলপথ সম্প্রসারণ, নতুন রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কার, রেলপথকে ডুয়াল গেজে রূপান্তরকরণ, নতুন ও বন্ধ রেলস্টেশন চালু করা, নতুন ট্রেন চালু ও ট্রেনের সার্ভিস বৃদ্ধি করা এবং ট্রেনের কোচ সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৯০০ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ ডাবল রেল ট্র্যাক নির্মাণ, এক হাজার ৫৮১ কিলোমিটার নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ, এক হাজার ৫২৭ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক পুনর্বাসন, ৩১টি লোকোমোটিভ সংগ্রহ, ১০০টি যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন এবং ২২২টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কুমিল্লা বা লাকসাম হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক দ্রুতগতির রেললাইন নির্মাণ, ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত এবং সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ এবং ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

আকাশপথের উন্নয়ন :
দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ চলমান। কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বাগেরহাট জেলায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণসহ যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দর এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও নবরূপায়ণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ:
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।

‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ - যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
 
বাংলাদেশের অর্জন:
ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হা জারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৩ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম।
 
শিক্ষাখাতে অর্জন:
শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে "শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট”।

 স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য:
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১”। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি(১) কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি(২) উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যুর হার ১৪৯ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩তে(৩)। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি(৪) মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেও বেশি জনশক্তি।
 
নারী ও শিশু উন্নয়নে অর্জন:
নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১”। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও। “জাতীয় শিশু নীতি-২০১১” প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুঃস্থ্, এতিম, অসহায় পথ-শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ–সাউথ এওয়ার্ডে।
 
 নারীর ক্ষমতায়নে অর্জন:
নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০% এর উপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।
 
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন:
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়।  টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি  ৩৭ লক্ষ(১) এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষে(২) উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
 
 কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন:

কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে।প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭ টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ  করেছেন ৩টা। তাঁর এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত।
 
প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে অর্জন:
বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত ২০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকগণ যেতে পেরেছে।
 
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ:
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে।
 
বিদ্যুৎখাতে সাফল্য:
বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট(১) বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে(২) উন্নীত হয়েছে। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট(৩) ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লক্ষ গ্রাহককে।নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি(৪) বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
 
শিল্প ও বাণিজ্য খাতে অর্জন:
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ঔষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ঔষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের আইটি শিল্প ১০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে।
 
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের অর্জন:

হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সালে এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি(১) টাকা। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০ এর সমীক্ষায় দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৫% সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হয়েছে।
 
ভূমি ব্যবস্থাপনায় অর্জন:
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১২ এর খসড়া।
 
করোনা মোকাবেলায় সাফল্য:
করোনার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযু্ক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর তিন মেগা প্রকল্পে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি:

তিনটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির চিত্র। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখতে পারে এ প্রকল্পগুলো। প্রকল্পগুলো হচ্ছে—পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী টানেল। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতাভুক্ত। পদ্মা সেতু চালু হলে তা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। আর কর্ণফুলী টানেল চালু হলে চিত্র বদলে যাবে চট্টগ্রামের। এছাড়া রাজধানীতে দ্রুত যাতায়াতে বড় ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, দ্রুত ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে খুবই সহায়ক হবে মেট্রোরেল। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ আগামী বছর শেষ হতে পারে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল চালু করার লক্ষ্যে তৎপর সরকার। আর কর্ণফুলী টানেল চালু হবে ২০২২ সালে। তিনটি প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ৬০ থেকে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানো হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলের দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হয়েছে গত ১২ ডিসেম্বর। এ ছাড়া আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল আগামী বছর চালু করতে কাজ চলছে পুরোদমে। 

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল শুরু করতে চায়। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, এক বছরের মধ্যেই সেতুটি চালু হবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে ১০ মাস থেকে এক বছর লাগবে। 

মেট্রোরেল: আগামী বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে দেশের প্রথম মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। ঢাকার মতিঝিল-শাহবাগ-ফার্মগেট হয়ে পল্লবীর দিকে গেলেই চোখে পড়ে ভূমি থেকে ওপর বরাবর পথ। মূল সড়ক থেকে প্রায় ১৩ মিটার উঁচুতে বসছে রেলপথ। চলছে স্টেশন নির্মাণের কাজ। বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য খুঁটিও বসে গেছে। এগুলো মেট্রোরেলের নির্মাণযজ্ঞের অংশ। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৫১ শতাংশ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সচিব এম এ এন সিদ্দিক  বলেন, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। স্টেশন রয়েছে ৯টি। ১১ দশমিক ০৪ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান। পাশাপাশি ৯০ মিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ৯টি স্টেশনের উপকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি মাসে আমরা প্রকল্পের সবশেষ অগ্রগতি জানাই।’ এমআরটি লাইন-৬ বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি ৪৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫২ দশমিক ১১ শতাংশ। কাওরানবাজার থেকে মতিঝিল অংশের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, গণপরিবহনের মধ্যে মেট্রোরেল সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি চালু হবে, তত মানুষ উপকৃত হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে যত দেরি হবে, তত ছোট গাড়ি, মোটরসাইকেল বাড়তে থাকবে। এগুলো যানজট বাড়ায়। 

কর্ণফুলী টানেলে সাংহাইয়ের মতো হবে চট্টগ্রাম: কর্ণফুলী টানেলের এক প্রান্তে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা এবং অন্য প্রান্তে চট্টগ্রাম নগর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর। বিভক্ত দুই প্রান্তকে যুক্ত করতে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার এবং চীনের এক্সিম ব্যাংক যৌথভাবে অর্থায়ন করছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২২ সালের মধ্যে টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পুরোদমে চালু হলে বছরে প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি চালু হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্পকারখানা ও পর্যটন শিল্পের। কাজের অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে গত ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন এ টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম টানেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম নগর চীনের সাংহাইয়ের মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেল হিসেবে গড়ে উঠবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। টানেল নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই টিউব নির্মাণকাজ শেষে ২০২২ সালে টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। কর্ণফুলী  কাজের গতি বাড়াতে জনবল ও যন্ত্রপাতি বাড়ানো হয়েছে। দ্রুতগতিতে চলছে কাজ। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬১ শতাংশ।

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে