ঢাকা : চলতি বছর ৩ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঐতিহাসিক মনোনয়ন পেয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো কোনও কৃষ্ণাঙ্গ-এশিয়ান নারী হিসেবে তিনি এ পদে নির্বাচনের টিকিট পেয়ে ইতিহাসে চমক সৃষ্টি করেছেন।
বুধবার ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্মেলনের তৃতীয় রাতে কমলা মনোনয়ন পেয়েই ট্রাম্পকে ব্যর্থ নেতার তকমা লাগিয়ে জো বাইডেনকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে করোনা মহামারীতে মার্কিনীদের জীবন ও জীবিকা হারানোয় ট্রাম্পের ব্যর্থতার মূল্য দিতে হয়েছে বলে কড়া সমালোচনা করেন কমলা।
বাইডেনের শহর উয়েলমিংটনে এক বক্তৃতায় বাইডেনকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে কমলা বলেন, আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে হবে, যিনি কালো, সাদা, ল্যাটিন, এশিয়ান সবাইকে একত্রিত করতে পারে।
এদিকে, কমলা তার বক্তব্যে ‘চিঠিস’ উচ্চারণ করায় স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক গুঞ্জন ওঠে। ওই সময়ে তার পরিবারের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কমলা তার বক্তৃতায় পরিবারের সদস্য চাচা, চাচি এবং চিঠিস অর্থাৎ তামিল শব্দে এর অর্থ খালার কথা টেনে আনেন। প্রথমে ধোঁয়াশা থাকলেও বিষয়টি টুইট বার্তায় খোলসা করেন তিনি।
হ্যারিসের বক্তৃতার আগে একই অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য বক্তব্য রাখেন ডেমোক্র্যাট দলীয় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বাইডেনের রানিংমেট কমলা হ্যারিসকে বন্ধু সম্মোধন করে বলেন, ‘তিনি জানেন কিভাবে সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে হয়, অন্যদের সাহায্য করতে হয় এবং মার্কিনীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হয়।’
মার্কিন রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রে কনিষ্ঠ সিনেটর হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এবার ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের রানিং মেট হলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে বেড়ে ওঠা কমলা হ্যারিস হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হেস্টিংস কলেজ অফ ল অফ হতে স্নাতক লাভ করেন। প্রথমে তিনি আল্যামেডা কাউন্টি জেলা অ্যাটর্নি অফিসে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে সান ফ্রান্সিসকো অ্যাটর্নি অফিসে ও আরও পরে সিটি অ্যাটর্নি অব ফ্রান্সিসকো অফিসে যোগ দেন। ২০০৩ সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন, ২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচিত হন।
ছক ভেঙে কিছু করার সংকল্প যেন রক্তেই আছে কমলা হ্যারিসের। মা শ্যামলা গোপালন ১৯ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ায় স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। আজ থেকে ৬২ বছর আগে খুব কম সংখ্যক নারীই সেই কাজ করেছিলেন। তিনি ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করতেন। সেই মায়ের মেয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০০৯ সালে তার মায়ের মৃত্যু হয়।
কমলার বাবা ছিলেন জামাইকার বাসিন্দা। মা দক্ষিণ ভারতীয়। কমলার এ সংবাদে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ওকল্যান্ডের মানুষ।
কমলা জিতলে তিনিই হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী যিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের গদিতে বসবেন। তবে শুধু কমলাই নন, ইতিমধ্যেই চার জন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী এবং প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় তুলসী গাবার্ড। বাকিরা হলেন ম্যাসাচুসেটসের সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, সাবেক আবাসন সচিব জুলিয়ান কাস্ত্রো এবং নিউ ইয়র্কের সেনেটর কার্স্টেন জিলিব্র্যান্ড। সূত্র : দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, রয়টার্স, উইকিপিডিয়া
আগামীনিউজ/এসপি