করোনায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের পাশাপাশি সমাজে অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও কষ্টের শেষ নেই। তারা সমাজের সাধারণ মানুষের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় আরো বেশী সমস্যায় পড়েছেন। ঘর থেকে বের হতে না পারার কারণে আয় রোজগার বন্ধ, বর্তমানে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷ হিজড়াদের দাবি, সরকার ও ধনী মানুষরা যেন এই করোনাকালে তাদের পাশে থেকে সাহায্য করে বিপদ থেকে রক্ষা করে।
পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেন এলাকায় কথা হয় এক হিজড়ার সঙ্গে। খুব বেশী বয়স না হলেও জানালেন, করোনাকালে খুব কষ্ট হচ্ছে জীবন চালাতে। কোন ত্রাণ সহায়তা দেয়নি কেউ। করোনাঝুঁকি জানলেও বাধ্য হয়ে বের হয়েছেন। তবে ব্যাগে তার সাবান আছে বলে জানালেন। বলেন, ‘মৃত্যুর ভয় সবার আছে ভাই, কিন্তু কী করুম।’
গত কয়েক দিনে ঢাকা, গাজীপুরের একাধিক হিজড়ার সাথে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় কোন সাহায্য সহযোগীতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের অভিযোগ, না খেয়ে দিন পার করে মানবেতর অবস্থায় তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় নি। এমনকি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বলেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঢাকা বা এর আশেপাশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিজড়ারা নানান সমস্যার মধ্য আছেন। বিশেষকরে এ করোনাকালে তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যদিও যারা গুরু শ্রেনীর হিজড়া তারা ভাল আছেন। কিন্তু, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন যারা নতুন করে গুরুর নিকট এসেছেন আর দিনমজুরী করেন। তাদের মজুরী বন্ধ হয়ে গেছে কোথাও সাহায্য সহযোগীতা না পেয়ে খুব কষ্টে দিন পাত করছেন।
সাভারের অনন্যা হিজরার সাথে কথা হয় আগামীনিউজের প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, সাভারে এ যাবত উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগীতা করা হয়েছে। তবে, তা খুব কম। অামরা স্থানীয়ভাবে সবার সহযোগীতা চাই।
হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করা তাসনুভা শিশির আগামীনিউজকে বলেন, বর্তমান অবস্থায় তারা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্য প্রত্যেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সেই সাথে কিছু কিছু বাড়ি ওয়ালা ভাড়ার জন্যে চাপ দিচ্ছে। এমনিতার তো ইনকাম বন্ধ। তার উপর বাড়িওয়ালার যদি এক্সট্রা প্রেসার ক্রিয়েট করে বা বাসা ছেড়ে দেবারমত চাপ প্রয়োগ করে তবে, তা জুলুম হয়ে যায়। কারণ বর্তমান সময়ে তাদের টিকে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
করোনার কারণে হিজড়ারা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছে। আগে থেকেই ডাক্তাররা সাধারণত তাদের চিকিৎসা করতে চায়না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য আরো খুব বেশি বাজে অবস্থা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এখন তো জ্বর কাশি ঠান্ডা হইলেই দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের যে কোনো জায়গায় ট্রিটমেন্ট পাওয়াটা দুস্কর। আর এই রকম একটা অবস্থায় হিজড়াদের চিকিৎসা পাওয়া আরো দুস্কর হয়ে পড়েছে, সেই সাথে বাড়ছে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী আগামীনিউজকে বলেন, আমরা সারা দেশে এই করোনাকালে বিভিন্ন ধরনের সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছি। সেই সাথে জেলা সমাজসেবা অফিসগুলোকে বলে দেওয়া আছে তারা যেন সম্বন্বয় করে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের দেয়।
তিনি আরো বলেন, কারো জন্য আলাদা ত্রাণের ব্যবস্থা করেনি মন্ত্রণালয়। ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন ৫০০ মানুষকে খাবার দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এছাড়া সারা দেশের সমাজসেবা কার্যালয় থেকেও বিভিন্নভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রকনুল হক বলেন, সবার দায়িত্ব সরকারের একার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে সমাজের এমন মানুষকে সাহায্য করা যায়।
আগামীনিউজ/ ইমরান/ তাওসিফ