Dr. Neem on Daraz
Victory Day
আমদানির আগেই প্রয়োজন গবেষণা

কৃষি পণ্যের অবাধ আমদানি বাড়াচ্ছে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি 


আগামী নিউজ | তরিকুল ইসলাম সুমন প্রকাশিত: মে ৫, ২০২০, ০৯:১৩ এএম
কৃষি পণ্যের অবাধ আমদানি বাড়াচ্ছে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি 

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলা ফসল সংগ্রহোত্তর ক্ষতি, কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বিতরণসহ  ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমিতে ক্রমবর্ধমান বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বাংলাদেশের কৃষির জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। দেশে ধান, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, তৈলবীজ, ফল ও সবজি, মৎস্য, ডেইরী পোলট্রির উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শস্য বহুমুখীকরণ, শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণে ভর্তুকি, গবেষণা ও সম্প্রসারণে এমতাবস্থায়, খাদ্য উৎপাদন সম্প্রসারণ অনিবার্য হয়ে পড়েছে। ফসল উৎপাদনে উচ্চ ফলনশীল জাতের সাথে সংকর জাত ব্যবহৃত হচ্ছে।  কৃষি উপকরণগুলোর মধ্যে বীজ হলো অন্যতম। ভালো বীজই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অন্যের সংস্থানের জন্য একদিকে বিদেশ থেকে কৃষি পণ্য সামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে, অন্যদিকে শষ্য বীজ ও আমদানি করতে হচ্ছে। বাজারে দেশীয় বীজের সরবরাহ একেবারেই কম। আগে হাট বাজারে দেশি শস্যের বীজ মিললেও এখন তা দুষ্প্রাপ্য। দেশীয় উৎপাদনে চাহিদা মেটাতে না পেরে চায়না, ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মিশরসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও কৃষিপণ্য আমদানি করা হচ্ছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা আমাদের প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কৃষি পণ্য আমদানি করলেও আগত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদানের বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে বিদেশ থেকে ফসলের নানা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগ-জীবাণু দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হতে পারে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, আমরা সবসময় পরিবেশের কথা চিন্তা করে কাজ করি। কৃষিজ পণ্য বা বীজ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্রের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও কৃষির মড়ক লাগতে পারে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক সময়ে ফসলে নতুন পোকা বা ফসলের রোগ দেখী যা আমাদের ছোট সময়ে দেখি নি। অনেক সময়ে বিদেশ থেকে আনা বীজে ফসল না হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিদেশি কোনো কৃষিজ পণ্য আমদানি আগেই পণ্যগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়,  ‘বীজ আইনের আওতায় বীজ বলতে খাদ্যশস্য, ডাল, তৈলবীজ, ফলমূল ও শাক-সবজির বীজ, আঁশ জাতীয় ফসলের বীজ, পুষ্পদায়ক বা শোভাবর্ধক উদ্ভিদের বীজ, পত্রযুক্ত উদ্ভিদের বীজ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া কোনো চারা, কান্দাল, বাল্ব, রাইজোম, রুট কাটিংসহ সব ধরনের কলম এবং উদ্ভিদের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে ছড়ানো কোনো জিনিস এর আওতায় পড়বে।

নতুন আমদানি নীতিতে চিংড়ি মাছ, জীবিত শূকর ও শূকরজাত সব ধরনের পণ্য, পপি সিড ও পোস্ত দানা, ঘাস, ওয়াইন লিজ ও আরগোল, ঘন চিনি, কৃত্রিম সরিষার তেল, সেকেন্ডারি বা সাব-স্ট্যান্ডার্ন্ড কোয়ালিটি বা নিম্নমানের পণ্য অথবা পুরোনো, ব্যবহৃত, রিকন্ডিশন্ড পণ্য বা কারখানায় বাতিলকৃত বা স্টক লটের পণ্য, রিকন্ডিশন্ড অফিস ইক্যুইপমেন্ট (ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরনো কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী ও পুরনো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী), সব ধরনের শিল্প স্লাজ ও স্লাজ দিয়ে তৈরি সার ও যেকোনো সামগ্রী, সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্যোগকালীন প্রয়োজন হয় খাদ্য বা  কৃষি পণ্য আমদানির। তাছাড়া সব ফসল, ফল-মূল জলবায়ুজনিত কারণে আমাদের দেশে উৎপাদন সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় কৃষি পণ্য আমদানির। উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজন সর্তকতা। পণ্য আমদানিতে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা না হলে বিদেশ থেকে ফসলের নানা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগজীবাণু দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হতে পারে। তাই পৃথিবীর সব দেশেই কৃষি পণ্য আমদানি ও রফতানির কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের বর্তমানে ০২টি সমুদ্রবন্দর, ০৩টি বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর, ০১টি নৌ-বন্দর ও আইসিডি কমলাপুরের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরো কয়েকটি কোয়ারেন্টিন স্টেশন রয়েছে। 

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আমদাননি কৃত পণ্যের সাথে পরিবাহিত হয়ে ধ্বংসাত্মক পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের জীবাণু দেশের অভ্যন্তরে বা আমাদের দেশ থেকে অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশ ও বিস্তার রোধ করার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হচ্ছে উদ্ভিদ সংগনিরোধ বা Plant Quarantine। বাংলাদেশে আমদানি রফতানি প্রায় ৯২শতাংশ সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রামের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ পরিসংখ্যানই এ বন্দরের গুরুত্ব ও কর্মক্ষেত্রের ব্যাপকতা তুলে ধরে। বিদেশ থেকে আগত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদানের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। বিগত বছরে অত্র স্টেশনে রাশিয়া থেকে আগত ২১,০০০ মেট্রিক টন গম পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু ও আগাছা বীজ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। 

আগামীনিউজ/তরিকুল/মিজান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে