ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত, বাংলাদেশেও এর বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলছে। সে কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে সেলুনগুলো। করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন দেশের লাখ লাখ পেশাজীবি ক্ষৌরকার বা নরসুন্দরা। সারা দেশের মধ্যে ঢাকার মতো বড় শহরে বসবাসকারীদের অবস্থা শোচনীয়। সেলুন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অনান্য পেশার মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগীতা আসলেও এ পেশায় কাজ করা লোকদের সাহয্যে কেউ এগিয়ে আসছেনা। এজন্য কাজ হারিয়ে খুব কষ্টে দিনপাত করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ঢাকা মহানগরীতেই ১০ হাজার নর সুন্দর রয়েছে বিভিন্ন সেলুনে কাজ করে। আর সারাদেশে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ এ পেশার সাথে যুক্ত। শুধু সংখ্যা নয় এর সাথে রয়েছে তাদের পরিবার। এই করোনাকালে কাজ না থাকায় দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। কিন্ত অবস্থা যাই হোক তাদের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ যায়নি। এদের অনেকের অভিযোগ জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ নিয়ে গেলেও ভোটার আইডি দেখে ২-৪ জনের বেশি দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এই সম্প্রদায়ের প্রায় সব পরিবারে এখন সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগরীর বেশ কয়েকটি সেলুন মালিকের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
মিরপুরের ডলফিন সেলুনের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। দোকান ভাড়া হিসেবে মালিককে প্রতিমাসে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। একই সাথে বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন খরচও আছে। কিন্তু গত ২৫ তারিখের পর থেকে সেলুন এক মিনিটের জন্যও খোলা হয়নি। আর ঝুঁকি নিয়ে খুলেও লাভ নেই, কারণ নগরীর কেউ এ সময়ে চুল কাটতে আসবেনও না।
মহাখালির ডিএইচওএস এ কাজ করা সুমন জানালেন অসহনীয় কষ্টের কথা। তিনি বলেন, এখানে যারা কাজ করেন তারা দিনে আনে দিনে খায়। গতমাস থেকে সেলুন বন্ধ হয়ে যাবার পর আমরা সীমাহীন কষ্টে দিনপাত করছি। এখনো কোথাও থেকে কোন সাহায্য সহযোগীতা পাইনাই।
রংপুরের এক সেলুন ব্যবসায়ী চিত্ত শীল বলেন, আমরা প্রতিদিন কাজ করি। প্রতিদিন বাজার করি। প্রতিদিন খাই। সংসারে মা আছেন, আছে আরো দুই বোন। কোনোমতে সংসার চলে। এখন কাজ বন্ধ। উপার্জন নেই। কষ্টে আছি। বাসায় বাজার নেই। হাতে যে টাকা ছিল। সেখান থেকে খরচ করা শুরু করেছি। কয় দিন আর চলবে। তারপর কী করব। জানি না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে নরসুন্দরা কর্মহীন অবস্থায় কলোনিতে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে, যারা সেলুনগুলোতে মজুরী ভিত্তিতে কাজ করে তাদের ভাইরাসের চেয়ে দৈনিক খাবারের জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, শঙ্কর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি সেলুন যেমন- মেন্স লুক, সিগনেচার সেলুন, ভাই ভাই সেলুন, হেয়ার কাট সেলুন, রাজু হেয়ার কাট সেলুন, হেয়ার ফ্যাশন সেলুনসহ আরো অনেক সেলুন বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডির হ্যারো বিক্স সেলুনের এক কর্মী রাইহান আলম জানান, আমাদের সেলুনে এসির সুযোগ-সুবিধা থাকায় ভিড় লেগেই থাকতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেলুন বন্ধ রাখা হয়েছে। এই ভাইরাসটি মানুষের মাধ্যমে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এই ভয়েই সেলুন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানীর সেলুন ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা।
বাংলাদেশ নরসুন্দর কল্যাণ সমিতি কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দিপক কুমার শীল আগামীনিউজকে বলেন, সারাদেশের দশলাখ নরসুন্দর ছাড়াও তিন লাখ পার্লার কর্মী এই করোনা মহামারিতে খুব কষ্টে দিনপাত করছি। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্য আমরা ঢাকা ডিসি অফিসে সাহয্যর আবেদন করেছি কিন্ত প্রায় মাস খানেক হয়ে গেলেও কোন সাহায্য বা সহযোগীতা পাই নাই। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট অনুরোধ আমাদের দিকে তাকান। এছাড়া সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা করার আহবান জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে সবাইকে। কিন্তু এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে সেলুনে চুল-দাড়ি কাটার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। আবার একই কাঁচি দিয়ে চুল কাটতে হয়। সেটাও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণেই কেউ যাচ্ছে না সেলুনে। করোনাভাইরাসের কথা শোনার পর থেকেই মানুষজন সেলুনে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। কাজ না থাকায় খুব কষ্টে দিনপাত করছেন তারা। তাদের দাবি, এই দুর্যোগকালে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরা যেন এগিয়ে আসেন।
আগামীনিউজ/ইমরান/মিজান