ঢাকাঃ রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন চরিত্রের অধিকারী ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিত। স্পষ্টবাদী কথা-বার্তায় যেমন ছিলেন আলোচিত, তেমনি কিছু মন্তব্যে হয়েছিলেন সমালোচিত।
তার ছোট ভাই ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রায় একই কারণে আলোচিত-সমালোচিত।
২০০৯ থেকে অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোমেন।
সম্প্রতি তার বিশেষ কিছু বক্তব্য দেশ জুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়। মোমেনকে নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তাকে নিয়ে নাখোশ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারাও।
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পর মোমেনের দুটি মন্তব্য নিয়ে শুরু হয় জোর সমালোচনা। এর মধ্যে একটি- সিলেট সফরে গিয়ে ‘বাংলাদেশের মানুষ সুখেই আছেন, বেহেশতে আছেন’। অপরটি, গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর একটি অনুষ্ঠানে ‘শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে ভারতবর্ষের সরকারকে অনুরোধ’ করা।
এমন গুরুতর দুটি মন্তব্যের পর নিজ ও বিরোধী দলসহ দেশের মানুষের কাছে হাসির পাত্র বনে গেছেন মোমেন। ছেড়ে কথা বলছেন না রাজনৈতিক নেতারাও। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো তাকে বলেই দিয়েছেন অহেতুক কথা বলে সম্পর্ক নষ্ট না করতে। কিন্তু আলোচনা-সমালোচনা তখনই গাঢ় হতে থাকে, যখন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ নন।
তাহলে ড. এ কে আব্দুল মোমেন কোন দলের?
শনিবার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে ১৫ আগস্ট স্মরণে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির অনুষ্ঠানে আব্দুর রহমান জানান, দলে মোমেনের কোনো পদ-পদবী নেই। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী। তাই তিনি যা বলবেন, সেটি কোনোভাবে আওয়ামী লীগের বক্তব্য হতে পারে না।
মোমেন যদি আওয়ামী লীগের না হয়, তবে তিনি কোন দলের- এ প্রশ্ন নিয়ে শনিবার থেকে আরেক দফা সমালোচনা শুরু হয়। দলের না হয়ে একজন মন্ত্রিত্ব পায় কীভাবে... এমন প্রশ্নও উঠেছে।
কিন্তু প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ছোট ভাই মোমেন আওয়ামী লীগেরই। একটি অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে রয়েছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট সিলেট মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুমোদিত ওই কমিটির প্রথম সদস্য হিসেবে ড. এ কে আব্দুল মোমেন নাম রয়েছে। একই দিনে অনুমোদিত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ১৪ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির তালিকায় তিন নম্বর সদস্য হিসেবে নাম রয়েছে মোমেনের।
তাহলে, মোমেন আওয়ামী লীগের নন; কথাটি কীভাবে এলো? এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ড. মোমেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির প্রথম সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য। যিনি (আব্দুর রহমান) বলেছেন, তিনিই জানেন মোমেন আওয়ামী লীগের কিনা?
সিলেটের দুই কমিটিতে মোমেন বহাল তবিয়তে আছেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের মন্তব্যের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি নন তিনি।
সিলেটের রাজনীতির বর্তমান ধারক-বাহক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন। তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলেও সম্ভব হয়নি। কারও ফোন বন্ধ, কেউ ফোন ধরছেন না।
আব্দুর রহমানের বক্তব্যে সরগরম সিলেট-১। দলে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে নিয়ে তার এমন মন্তব্য মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের ভাষ্য, শীর্ষস্থানে থেকে একজন নেতার মন্তব্য সংবেদনশীল হওয়া দরকার। কিন্তু আব্দুর রহমানের বক্তব্যে সেটি পাওয়া যায়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আওয়ামী লীগের কমিটির একজন সম্মানিত সদস্য। তার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু তিনি তো আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছেন, জয় পেয়েছেন। তিনি দলের কেউ নন, এই কথা অগ্রহণযোগ্য।
সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের মোবাইলে কল দেয়া হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
এমবুইউ