ঢাকাঃ ভয়েস কল-ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) দিতে না পারায় দেশের অন্যতম শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পর দেশের সর্ববৃহৎ এই মোবাইল ফোন অপারেটরের বিভিন্ন সেবা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন ব্যবহারকারীরা।
গ্রামীণফোন গ্রাহকদের কাছ থেকে ‘ইচ্ছেমতো’ টাকা কেটে রাখছে বলেও একাধিক ব্যবহারকারীর অভিযোগ।
ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই লিখেছেন, নানাভাবে হয়রানির শিকার হলেও নম্বর পাল্টাতে চান না বলে এখনও তারা গ্রামীণফোন ব্যবহারে ‘বাধ্য হচ্ছেন’।
‘জিপি’কে দেশ থেকে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেক ব্যবহারকারী। মাইনুল হোসাইন নামের একজন জানিয়েছেন লাইসেন্স বাতিল করার দাবি। আগে কলড্রপ হলে ১ মিনিট ফেরত দিত, এখন তাও দেয় না। শুধু নেট ভালো এ কথা বলে দিনের পর দিন গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারও নীরব তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে।
আহসান হাবিব নামের একজন বলেন, বড় প্রতারণা হলো ইন্টারনেট নিয়ে। আপনারা খেয়াল করবেন, আমাদের পছন্দ করা কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজের যখন মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তখন নিজে থেকেই প্রতি কিলোবাইটে পয়সা কাটা শুরু হয়। আমি পুনরায় কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজ না চাইলে কেন নিজে থেকেই প্রতি কিলোবাইটে পয়সা কেটে নেবে? আমাদের কষ্টের পয়সার অবশ্যই মূল্য আছে। এর কি কোনো প্রতিকার আছে?
প্রতিকার চাইতে গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলেও যে হয়রানির শিকার হতে হয়, সেই অভিজ্ঞতার কথা ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন কয়েকজন।
সৈয়দ আতিক হোসেন লিখেছেন, অকারণে ব্যালেন্স কেটে নিচ্ছে, কাস্টমার কেয়ারে কল দিলে ১০ মিনিটের অধিক সময় অপেক্ষায় রাখছে এবং বলছে, তাদের কাছে ব্যালেন্স কেটে নেওয়ার কোনো এসএমএস আসেনি। বলছে, ‘এক ঘণ্টা পরে কল দিন’। এক ঘণ্টা পরে বলছে, তারা কাটেনি। তাহলে গেল কোথায়?”
মো. শাকিল লিখেছেন, গ্রামীণ ফোনের এই চোরাকারবারি বন্ধ করা দরকার। কথা বলতে বলতে এক ধরনের মিউজিক বেজে ওঠে, কল কেটে যায়। টাকা তো ঠিকই কাটছে। কাস্টমার কেয়ারে কল করলেও দুই টাকা কাটে; 121 এ কল করুন, ওখানে কল করলে বলে- বাংলা শুনতে 1 চাপুন- এ রকম হাজারো...।
মো. মাহমুদ হোসেন লিখেছেন, আমি একজন স্টার গ্রাহক। বুঝতেই পারছেন, কত টাকা নিয়েছে। আমার মনে হয় আজ পর্যন্ত যত মিনিট কথা বলেছি, তার চেয়ে তিন গুণ টাকা নিয়েছে।
সম্প্রতি টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিটিআরসিকে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টিক্যাব অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডাটা ফেরতের দাবি জানিয়ে আসলেও নানা অজুহাতে ডাটা ফেরত দিচ্ছে না অপারেটরগুলো। বাজে নেটওয়ার্কের কারণে কলড্রপের ও মিউট কলের শিকার হয়ে একই কলের জন্য একাধিকবার টাকা গুনতে হচ্ছে গ্রাহককে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ মাসে গ্রাহকের ৫২ কোটি ৫৯ লাখ মিনিট কলড্রপ হয়েছে। অপারেটরগুলো ক্ষতিপূরণ দিয়েছে মাত্র ১১ কোটি ৪৫ লাখ মিনিট। যা গ্রাহকদের খরচ করা টক টাইমের মাত্র ২২ শতাংশ। এতে ৪০ কোটি ৯৩ লাখ মিনিট কলড্রপের বিপরীতে গ্রাহকদের প্রায় ১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। যেখানে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে সেখানে অপারেটররা প্রতি ৩ থেকে ৭ মিনিটের বিপরীতে ১ মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে অবস্থা আরও শোচনীয়। কোনো যানবাহনে উঠলে ও রুমের ভেতরে ঢুকলেই ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা পরিণত হয়ে যাচ্ছে টু-জিতে।
প্রসঙ্গত, ভয়েস কল-ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) দিতে না পারায় দেশের অন্যতম শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ২৯ জুন এ সংক্রান্ত নির্দেশনা গ্রামীণফোনের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গ্রামীণফোন নতুন কোনো সিম বিক্রি করতে পারবে না বলেও নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।
এসএস