Dr. Neem on Daraz
Victory Day
সারা দেশে ঢুকে পড়েছে আরশা

দেশের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গভীর ষড়যন্ত্র


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৫:২১ পিএম
দেশের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গভীর ষড়যন্ত্র

ফাইল ছবি

ঢাকাঃ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশও এর অন্যতম। কিন্তু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া টেকনাফে ৩৪ আশ্রয় শিবিরে বসবাসরত কিছু রোহিঙ্গা যেসব অপকর্ম শুরু করেছে সেটা ভয়ঙ্কর, যা আগামীতে দেশের ভবিষ্যতকে হুমকির দিকে নিয়েও যেতে পারে। কারণ রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র ক্যাডার সংগঠন আরসা এখন তাদের শুরুর দিকের সিদ্ধান্ত ও তৎপরতা থেকে সরে এসেছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর অনুগত হয়ে কাজ করছে, যাতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে না যায়। 

সুত্র বলছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের গোপন বাহিনী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যাপক কর্মতৎপর বিশেষ করে বান্দরবান খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি বেশি। শুধু বান্দরবান খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে তারা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র গ্রহণ করে পাসপোর্ট তৈরি করে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য ছুটছে। সেখানে গিয়ে তারা নানা রকমের অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। ধরা পড়ার পর ওই পাসপোর্টধারীদের বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, এতে করে বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হতে পারে যা দেশের উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারবে ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এই রোহিঙ্গাদেরকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের একটি বৃহত্তর দালাল চক্র। যাদের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, এয়ারপোর্ট পাস করা এবং ভাষা শিখার মত কাজ গুলা অবাধে করে যাচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশের শ্রম রপ্তানিতে বাধাগ্রস্ত হয় তার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত তৎপর আছে। যখনই দেশে একটা ঘটনা ঘটে তখনই তাদের মিডিয়ায় বাংলাদেশীদের বিশাল করে তুলে ধরে তারা। বাংলাদেশীদের ক্ষুদ্র অপরাধকে তারা আকাশ সম করে তুলে ধরে। অথচ ভারতের লোকজনেরা বিপদজনক ঘটনা ঘটায়েও তারা পার পেয়ে যায় কারন ভারতীয় মিডিয়াতে সেগুলা প্রকাশ করা হয় না।

এদিকে রোববার (১৬ জানুয়ারি) ভোর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৌকার মাঠ সংলগ্ন এলাকা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ মিয়ানমারের নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ’র ভাই শাহ আলীকে (৫৫) আটক করে এপিবিএন সদস্যরা। এ সময় তার কাছ থেকে  বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উদ্ধার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)।  যার নম্বর- ১৯৭১১৫৯৪ ১২০০০০০১৮। চট্টগ্রামের কোতয়ালি থানার দেওয়ান বাজারের জয়নব কলোনীর ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি ওই পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন।

পুলিশ জানায়, দেড় মাস ধরে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পাহাড়ে তার অনুসারীদের নিয়ে অবস্থান করছিল শাহ আলী। শেষে পুলিশি তৎপরতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির অবস্থান ও তার পরিকল্পনার কথা পুলিশকে জানিয়েছে শাহ আলী। আতাউল্লাহ এখন মিয়ানমারের একটি পাহাড়ে পালিয়ে আছে বলে জানিয়েছে সে। পাহাড়টির নামও জেনেছে পুলিশ। তবে এ বিষয়ে আরো জানার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই পাহাড়ে বসেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে থাকা আরসার বিভিন্ন গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করছে আতাউল্লাহ।

তিন বছরে ৫ শতাধিক আরসা সদস্য গ্রেফতার: গত তিন বছরে পাঁচ শতাধিক আরসা সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এপিবিএন-১৪। তবে গ্রেফতারের পর এসব সদস্য বিভিন্ন এনজিও সংস্থার আইনি সহায়তায় জামিন পায়। যদিও পুলিশ সদস্যরা এসব গ্রেফতারকৃতদের কথিত আরসা সদস্য বলেছেন।

কক্সবাজারের ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাইমুল হক বলেন, ‘শাহ আলীকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়েছে। আমরা তাকে উখিয়া থানায় সোপর্দ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘নাশকতার পরিকল্পনায় লিপ্ত ছিল সে। আমরা তার কাছ থেকে আরসা প্রধানের কিছু তথ্য পেয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরসার সাবেক নেতা জানান, ১ ফেব্রুয়ারি হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার নতুন দফায় শুনানি ঘিরে ফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামালার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা। মিয়ানমার সরকার কথিত আরসাকে আধুনিক ও ভারী অস্ত্র সরবরাহ করেছে। এসব অস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর ওপরে ব্যবহার করতে পারে আরসা।

তিনি বলেন, ‘আমি একসময় পথ হারিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের জন্য কল্যাণ মনে করে আরসার একটি গ্রুপকে নেতৃত্ব দিয়েছি। পরে বুঝতে পারি আরসা আসলে মিয়ানমার সরকারের হয়ে কাজ করছে। তাই আমি সংগঠন থেকে বের হয়ে আসি।’

বর্তমানে আরসার সক্রিয় নেতা ও সদস্য ৫ হাজারের বেশি। কিন্তু তাদের সহযোগী সদস্য সংখ্যা লক্ষাধিক। সক্রিয় ক্যাডাররা মিয়ানমারের গহীন অরণ্যে ৪টি ঘাঁটি করে ও মিয়ানমার অভ্যন্তরে অবস্থিত কোনার পাড়া ক্যাম্পে অবস্থান করছে। সহযোগী সদ্যরা বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে রয়েছে। তারা সবসময় আরসা নেতার অনুগত হয়ে খুনখারাবি করছে আশ্রয় ক্যাম্পে। মিয়ানমারেও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রতিটি গ্রামে তাদের ক্যাডার ছিল। ২০১৭ সালের পর তাদের কার্যক্রম কোনারপাড়া ও আশ্রয় ক্যাম্প কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কেয়ামত পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাবে না। রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পুস করার পিছনে কারন হচ্ছে  প্রথমত তারা মুসলমান, দ্বিতীয় হচ্ছে  আমাদের প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত, চীন ও রাশিয়ার বানিজ্যিক স্বার্থ।  মুলত ভারত মিয়ানমারে টেলিকমিউনিকেশন ব্যবসা পরিচালিত করে। চীন সে দেশের রাস্তাঘাঠসহ বিভিন্ন উন্নয়ন এবং রাশিয়া খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রন করে।তিন বৃহৎ শক্তিশালী দেশই বাংলাদেশের বন্ধু অথচ তারা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে একটি কথাও বলছে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও চীন মিয়ানমারকে চাপ দিলেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিয়ে  যাবে। রাশিয়া বললে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। এই তিন পরাশক্তির সদইচ্ছার অভাবেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না এবং যা কোনো দিন  হওয়ার সম্ভবনাও নাই।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে