বগুড়াঃ আজ পহেলা মে। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে মেহনতী শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মে দিবস। মে দিবস কে ঘিরে বছরের পর বছর উচ্চারিত হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকারের, মজুরি বৈষম্যমের এবং অনাকাংখিত শ্রম বর্জনের কথা। তবে আজও প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে অনাকাংখিত শিশুশ্রম এবং নারীশ্রমে মজুরি বৈষম্য।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় এখনও বন্ধ হয়নি শিশুশ্রম। উপজেলার বিভিন্নস্থানে চায়ের দোকান, হোটেল, ফার্নচার কারখানা, ইট ভাটায় শিশু শ্রমিকদের কে নামমাত্র মজুরিতে কাজে নিযুক্ত করছে স্বার্থবাদী মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভাবি ওইসব শিশুদের বেশিরভাগ পিতামাতার বিচ্ছেদপূর্ণ পরিবারের সন্তান। পূর্ণ অভিভাবকত্ব না পেয়ে দিশাহীন শিশুরা নিজেরাই নেমে পড়ে কাজের সন্ধানে। আবার কখনও একক পিতা অথবা একক মাতার সাথে বসবাস করে এমন শিশুদের কাজে রেখে আসে ওইসব পিতা মাতা।
মালিকরা শিশুশ্রম লুফে নিচ্ছে নিজেদের স্বার্থে। অনেক শিশুরা প্রাত্যহিক কাজের মজুরি হিসাবে পেয়ে থাকে মাত্র ১০ টাকা । কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত আর একটু বেশি মজুরি পেয়ে থাকে শিশুশ্রমিকরা। আবার স্বল্পপুঁজির চা অথবা ভ্রাম্যমান হোটেলে শুধুমাত্র খাবারের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে শিশুশ্রম।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর এবং উপজেলার তালোড়া, জিয়ানগর, বেড়াগ্রাম, তালুচ, চৌমূহনী, আলতাফনগর, সাহারপুকুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়ে শিশুশ্রমের অনাকাঙ্খিত দৃশ্য। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী ১৪ বছরের নীচে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্যদিকে, নারীশ্রম আইনগতভাবে বৈধ হলেও দুপচাঁচিয়ায় শ্রমের মজুরিতে ঠকতে হয় নারীদের। অনেকসময় পুরুষের সমান কাজ করে পুরুষের অর্ধেকের চেয়েও কম বেতন পেয়ে থাকে নারীশ্রমিকরা।
দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে গড়ে ওঠা মাঝারী ও ছোট কারখানা ছাড়াও অবকাঠামো নির্মান ও কৃষিক্ষেত্রে নারীরা শ্রমে নিযুক্ত। এসব নারীদের অনেকেই তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা অথবা অভাবি পরিবারের সন্তান। নিজেদের সাবলম্বী করার জন্য শ্রমে নিযুক্ত হলেও নারীরা মজুরি বৈষম্যের জালে বন্দী।
দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিভিন্ন কারখানায় এবং অবকাঠামো নির্মানে কম মজুরিতে নারীরা শ্রমে নিযুক্ত। তারচেয়ে বেশি অবহেলিত কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের শ্রম। কৃষিক্ষেত্রে নারীরা কাজ করে কেবল কৃষি উৎপাদিত পন্যের বিনিময়ে। নারী শ্রমিকরা সরিষা, আলু, মরিচ উত্তোলনসহ কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শ্রমে নিযুক্ত হয়।
এবার আলু তোলা মৌসুমে কৃষিক্ষেতে সারাদিন আলু তোলার বিনিময়ে নারী শ্রমিকরা জনপ্রতি পেয়েছে ১৫ থেকে ২০ কেজি আলু। সেসময় ওই পরিমান আলুর দাম ছিল ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। অথচ একইসাথে একজন পুরুষ শ্রমিকের আলু তোলা কাজে মজুরি ছিল ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। বেশি মজুরির একজন অথবা দুজন পুরুষ শ্রমিকের সাথে কাজ করত কম মজুরির ৭ থেকে ৮ জন নারী শ্রমিক।
দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামারুজ্জামান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক রাবেয়া বেগম বলেন, রাষ্ট্রে নারী পুরুষের অধিকার সমান না হলে একটি দেশের সমষ্টিগত উন্নয়ন বাধার মুখে পড়ে। শ্রমের মজুরিসহ সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আগামীনিউজ/এএস