Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সফল দেলোয়ার


আগামী নিউজ | শামীম হোসেন সামন, দোহার-নবাবগঞ্জ প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২১, ১০:১০ এএম
ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সফল দেলোয়ার

ঢাকাঃ নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বিদেশ ফেরত দেলোয়ার হোসেন। উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের বলমন্তচর গ্রামের ইছামতী নদীতে ভাসমান খাঁচায় নিজ উদ্যোগে মাছের চাষ শুরু করেন দেলোয়ার হোসেন। প্রথম দিকে মাত্র ২টি খাঁচা নিয়ে শুরু করেন ভাসমান খাঁচায় মৎস্য চাষ। ইছামতী নদীতে নেটের (জাল) সাহায্যে তৈরি করা খাঁচায় তেলাপিয়া মাছের চাষ করেছেন তিনি।

কঠোর পরিশ্রম ও মৎস্য অধিদপ্তরের পরামর্শে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন অল্প শিক্ষিত মধ্য বয়সী দেলোয়ার। এক সময় পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে সৌদি আরবে গেলেও দেশেই কিছু একটা করবেন এমন স্বপ্ন নিয়ে ফিরে আসেন তিনি। হতাশা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে দিনগুলো যখন বিষন্ন ঠিক তখনই মনস্থির করলেন মাছ চাষ করার। এরপর মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন ভাসমান খাঁচায় মাছ। বাড়ির পাশের ইছামতি নদীতে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ করেন। প্রথম বছর ই লাভের আশা দেখে ধীরে ধীরে খাঁচার সংখ্যা বাড়ান তিনি। পর্যায়ক্রমে খাঁচার সংখ্যা বাড়তে থাকে এতে লাভবানও হতে থাকেন তিনি।

প্রবাসী দেলোয়ার অন্যের অধীনে চাকরির জন্য বসে না থেকে নিয়েছেন স্বাবলম্বীতার পথ। তাকে দেখে এখন অনেকেই খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেকারত্ব ঘোঁচাতে এলাকার যুবকরা নদী পাড়ে নেট দিয়ে ছোট ছোট মাছের প্রকল্প গড়ে তুলছেন। খুব অল্প সময়ে প্রাকৃতিক উপায়ে বিক্রির উপযোগী হয় এসব মাছ। এর স্বাদও ভাল, বাজারেও চাহিদা বেশ।

সরেজমিনে উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের বলমন্তচর গ্রামের ইছামতী নদীর পাড়ে দেলোয়ারের মাছের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ২২টি খাচাঁয় তেলাপিয়া মাছ চাষ করছেন। খাঁচার চারপাশে লোহার পাইপ, বাঁশ ও ড্রাম দিয়ে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ১০ ফুট বাই ২০ ফুটের খাঁচাগুলোর গভীর রয়েছে ৮ ফুট। সার্বক্ষনিক থাকা ও মাছের খাবার, নেট ইত্যাদি রাখার জন্য নদী পাড়ে একটি ঘর তৈরি করেছেন। দেলোয়ারকে দেখা যায় নৌকায় করে মাছের খাবার দিচ্ছেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠা এসব মাছের রোগ-বালাই হয়না। তাই কোন মেডিসিন প্রয়োগ নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যায়। পুকুর বা ঘেরে একটি তেলাপিয়া মাছ এক কেজি হতে সময় নেয় ৬ থেকে ৭ মাস, আর নদীতে খাঁচায় তেলাপিয়া কেজি হয় ৩ থেকে ৪ মাসে। প্রতি ৩ মাস পর পর মাছ বিক্রি করা যায়।’

দেলোয়ার শোনান জীবনের প্রথম দিকের গল্প। পরিবারের সুখের কথা ভেবে একসময় পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে যদিও তিনি ভালো ছিলেন তবুও নিজের দেশে কিছু একটা করার স্বপ্ন তার। এরপর তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। উদ্যোগ নেন ভাসমান খাঁচায় মাছ করবেন। মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে আলাপ করলে তারা উৎসাহ দেন। তাদের সার্বিক তত্বাবধায়ন ও পরামর্শে শুরু করেন খাঁচায় মাছ চাষ।
মাত্র দুইটি খাঁচা নিয়ে শুরু করেন মৎস্য চাষ। পর্যায়ক্রমে ৬০টি খাঁচায় ই তেলাপিয়ার চাষ করেন একসময়। কিন্তু বর্তমানে ইছামতী নদীতে পানির অভাব থাকায়  বর্তমানে মাত্র ২২টি খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ রয়েছে।

প্রথম দিকে নিজ উদ্যোগে নদীতে খাঁচা স্থাপন করেছেন তিনি। পরে সরকারিভাবে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকেও খাঁচা দেওয়া হয় তাকে। এরপর তিনি লাভবানও হয়েছেন বেশ। ভাগ্য বদলেছেন স্বপ্নবাজ এই উদ্যোক্তা। কঠোর পরিশ্রমী হওয়ায় তিনি দুইবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।

স্থানীয় যুবক সালমান আহমেদ বলেন ,‘দেলোয়ার যেভাবে পরিশ্রম করে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন, তা সকলের জন্য অনুকরনীয়। সে সারারাত জেগে মাছের প্রকল্প পাহারা দেয়। কাজের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান রয়েছে বলে আজ সফলতা ধরা দিয়েছে তাকে।’

এব্যাপারে উপজেলা  মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয়াংকা সাহা বলেন, ‘দেলোয়ার একজন পরিশ্রমী ও স্বপ্নবাজ মানুষ। তাকে প্রথম বলার পর সে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। তাকে দেখে এখন অনেক খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছে। দেলোয়ার খাঁচায় মাছ চাষের সাথে তার পারিবারিক উন্নতি ও নিজ আত্মকর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছেন।’

মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেলোয়ারসহ সকল চাষিরে সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রিয়াংকা সাহা।

আগামীনিউজ/জনী

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে