Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনার সংক্রমণ কতটা বিস্তৃতি লাভ করেছে?


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২১, ১২:৪১ পিএম
করোনার সংক্রমণ কতটা বিস্তৃতি লাভ করেছে?

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ গেল বছরের ২৩ মার্চ করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩৩ জন। এর এক বছর পর গতকাল ২৩ মার্চ রোগী শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৫৫৪ জন। করোনা সংক্রমণের এক বছর পর এসে একদিনে রোগী শনাক্ত বেড়েছে ৩ হাজার ৫২১ জন। করোনা সংক্রমেণর এ পরিসংখ্যানই বলছে, দেশে করোনার সংক্রমণ কতটা বিস্তৃতি লাভ করেছে। এর মধ্যে দেশে করোনা সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, যেটি গেল বছরের ভাইরাস থেকে ৭০ গুণ বেশি সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ আবার আগের মতো ভয়াবহ অবস্থায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। দেশে করোনার ইউকে ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত রোগী থাকায় ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এ সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম ৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এসব রোগী ছিল ঢাকা ও মাদারীপুর জেলার। প্রথমদিকে সংক্রমণ বেশি হওয়ায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুরকে ক্লাস্টার এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সংক্রমণ রোধে ক্লাস্টার এরিয়া লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউন করার পর ক্লাস্টার এরিয়া মাদারীপুরে সংক্রমণ বিস্তার বেশি না হলেও ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এর পর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ বিভিন্ন স্থানে গমন করায় সেখানে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। এর পর করোনার সংক্রমণ বেড়ে মে-জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। ওই সময় দিনে ৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হতো এবং ৫০-৬০ জনের মতো মারা যেত। কিছুদিন একই অবস্থায় থেকে আগস্ট মাসের শেষ দিকে করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করে। এর পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে করোনা রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশে নেমে আসে। শীতের আগমন ঘটার আগ থেকেই অর্থাৎ নভেম্বর থেকে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করে এবং নভেম্বরে করোনার রোগী শনাক্তের হার ১৫ শতাংশ পৌঁছে। এর পর কিছুদিন সংক্রমণ উঠানামা করে ডিসেম্বরের শেষ দিকে আবারও কমতে শুরু করে এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণ হার ২ থেকে ৩ শতাংশর মধ্যে অবস্থান করে। কিন্তু মার্চ মাসের শুরু থেকে সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকে। গতকাল সংক্রমণ বেড়ে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, ইউকে ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ করার ক্ষমতা মূল ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছিলেন, নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, করোনার মূল স্ট্রেইনের চেয়ে এটি ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে মার্চে ১৪-১৫ জনের শরীরে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে এ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তাদের সংস্পর্শে আসা লোকের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করা হয়েছে। ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আগে তরুণদের সংক্রমিত হওয়ার হার কম হলেও এখন শিশু ও তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি। যেহেতু দেশে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এখন দরকার একে ভালোভাবে স্টাডি করা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা বেড়ে আগের মতো পরিস্থিতি হতে পারে বা তার থেকেও বেশি ছড়িয়ে যেতে পারে। এমনটি হতে পারে দু-তিনটি কারণে। প্রথম কারণটি হচ্ছে দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ইউকে ভ্যারিয়েন্টের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্ট খুবই শক্তিশালী ও দ্রুত ছড়ায়, অন্য দেশগুলোতে খুবই দ্রুত ছড়াচ্ছে। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, আমাদের যে ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায় সেটি ভালোভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর পরিবেশ পেয়েছে। এখন অনেক বিয়েশাদি বাড়ছে, জনসমাবেশ বাড়ছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে লাখ-লাখ মানুষ যাচ্ছে। এক কথায় করোনার সংক্রমণের জন্য পরিবেশটা বেশ উপযুক্ত। আরেকটি বিষয় হলো আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে সংক্রমণটা কেন বাড়ছে, সেটি নিয়ে গবেষণা দরকার।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি সমস্যা হচ্ছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক রাখতে এখন যে অবস্থা আছে সরকার সেই অবস্থা থেকে সরিয়ে আসতে চাইবে না। এখন বইমেলা চলছে সেখানে লাখ লাখ মানুষের জমায়েত হচ্ছে। আমরা গত কয়েকদিন ধরে বলছি বইমেলা বন্ধ রাখতে, কিন্ত সেটি আমলে নেওয়া হচ্ছে না। বইমেলার কারণে যেমন সংক্রমণ বাড়বে, আবার এ ধরনের মেলা দেখে মানুষ ভাববে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে বইমেলা না বাড়ালেও জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠানের আয়োজনে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। মানুষ এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখে স্বাভাবিক জীবনযাপনের দিকে যেতে পারে। যেটি সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে দায়ী।

অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেগুলো এখন নেওয়া হচ্ছে না। যেমন দেশে করোনার টেস্টিং, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন কঠোরভাবে করা দরকার, সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক জোনিং পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। সব মিলিয়ে আমরা খারাপের দিকে যাচ্ছি।

অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, এবারের সংক্রমণের তীব্রতা যুবকদের মধ্যে বেশি। আমাদের যুব জনগোষ্ঠী যেহেতু বেশি, তারা যদি বেশি আক্রান্ত হয় তা হলে হাসপাতালে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। এতে করে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বাড়বে। এতে করে ঝুঁকি বাড়বে শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন এক বছর হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সামনের দিকে স্কুল-কলেজ খোলা যাবে না, অনেক কলকারখানা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আশঙ্কা সামনের দিকে আমরা খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ পরিস্থিতি আগের মতো বা তার থেকেও খারাপ হতে পারে। আমাদের সাবধান হতে হবে, সরকারকে কঠোর হতে হবে।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে