শুনলো সজনী, অইযে বাঁজে বাঁশি
কেমন কেমন করে প্রাণ, হয়ে উদাসী॥
বাঁশিতে কি এতোই মধু, পাগল করল কূল বধু
ঘৃণা লজ্জ্বা ভয় মান, গিয়েছে ভাসি॥
যে শুনেছে বংশি ধ্বনি, হারাইয়া গেছে প্রাণই
আপনা প্রাণ পরকে দিয়ে, গলে দিয়েছে ফাঁসি॥
মনোচোর সে বংশী ধরে, মনোমোহন ধরতে নারে
আপ্তাবদ্দির বাঁশির স্বরে মন করে খুশি॥
প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ
প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা মনোমোহন তাঁর কানে সব সময় প্রকৃতির এক সত্য সুর শুনতে পান। মানুষ যখন তার নিজের মনের লোভ, দ্বেষ ও মোহের ঊর্ধ্বে উঠে তখন সে সব সময় শ্যাম তথা সুন্দরের প্রাকৃতিক বাণীর বা সত্য সুর উপলব্ধি করতে পারে। এখানে সজনী তথা দেহমনকে সেই সত্যের সুর শুনতে পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। এই বাঁশিতে মধুর সুর ওঠে। পৃথিবীর সকল কিছুতেই বস্তুগত দুঃখ রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির এই বস্তুগত সুরে সত্যের ডাক আছে। এই ডাক কেবল প্রজ্ঞাবান সত্ত্বারাই শুনতে পায়। তাদের মনের মধ্যে কোন বস্তুগত আকর্ষণ না থাকার কারণে তাদের কানে ও হৃদয়ে প্রকৃত সত্যের সুর আসে। মানুষ পৃথিবীর মাঝে সব সময় বস্তুর মোহে ব্যতিব্যস্ত থাকে। সকল সময় তার দেহ মনের মধ্যে বস্তুর দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। সে কোন অবস্থাতেই সেই বস্তুময় ডাক ছাড়া অন্য কোন কিছুই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না। তার মনের মধ্যে সর্বদা বস্তুর ডাক তথা বস্তুর আকর্ষণ দ্বারা ডুবন্ত অবস্থায় থাকে। সে বস্তুর মধ্যে ডুবে থাকে।
কোন সত্ত্বা যখন প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা তথা গুরুর নির্দেশ অনুযায়ী সাধনার শক্তির দ্বারা নিজের মধ্যে শক্তি অর্জন করে তখন তার মধ্যে সব সময় প্রকৃতির সকল কিছু থেকে এক জাতীয় সত্য সুর আসে। এই প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা কোন কিছুতেই আর কোন গরমিল তথা বিশৃঙ্খলা দেখে না। তার কানে বা চোখে সব কিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে পারে। কোন কিছুতেই অসামঞ্জস্য বা গরমিল দেখতে পায় না। সব সময় তার দেহমনের উপর প্রজ্ঞার শক্তির মাধ্যমে সত্য সুন্দর সুর এসে ধরা দেয়। যেহেতু তার অন্তরের মধ্যে সত্য বা শক্তির সৃষ্টি হয়েছে সে কারণে তার কাছে সর্বদা প্রজ্ঞার সুর শুনতে পারে।