Dr. Neem on Daraz
Victory Day

শতবর্ষের আশ্চর্য মেলবন্ধন ‘হাজিয়া সোফিয়া’


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২১, ০১:১১ পিএম
শতবর্ষের আশ্চর্য মেলবন্ধন ‘হাজিয়া সোফিয়া’

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ ধর্মীয়, রাজনৈতিক আবেদনের উর্ধ্বে অনন্য এক স্থাপত্য নিদর্শন হয়ে রয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের ‘হাজিয়া সোফিয়া’। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরটি যেমন দুটি মহাদেশের সহাবস্থানের প্রতীক, তেমনি ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের সহাবস্থানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘হাজিয়া সোফিয়া’।

দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় ১,৫০০ বছর আগে। একটি বাইজেন্টাইন খ্রিস্টান ব্যাসিলিকা হিসেবে। কিন্তু বর্তমানে অনেকটা প্যারিসের আইফেল টাওয়ার বা এথেন্সের পার্থেননের মতো এটিও একটি অসাম্প্রদায়িক স্থাপত্যশৈলী হিসেবে পরিগণিত হয়। অবশ্য শুধু স্থাপত্য কৌশলের কারণেই যে এটি বিখ্যাত তা নয়, এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটির রয়েছে নানা রকম রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং শৈল্পিক আবেদন।

তুরস্কের পুরাতন অংশে বসফরাস প্রণালীর কোল ঘেঁষে নির্মিত এই স্থাপনাটি সনাতন খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষের কাছেই মর্যাদার বস্তু। কেননা, তুরস্কের বহুবছরের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের ধারক-বাহক এই স্থাপনা।

কালের বিবর্তনে এটি ব্যবহৃত হয়েছে গ্রিক সনাতন খ্রিস্টানদের ক্যাথেড্রাল, রোমান ক্যাথলিকদের ক্যাথেড্রাল এবংমুসলিমদের মসজিদ হিসেবে। কিছুদিন আগেও এটি সব ধর্মের মানুষদের জন্য জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত ছিল। তবে প্রায় ৮৫ বছর পর বর্তমানে এটি মসজিদ হিসেবে আবার ব্যবহৃত হচ্ছে। 

হাজিয়া সোফিয়ার তুর্কি নাম ‘আয়া সোফিয়া’। একে ‘পবিত্র জ্ঞানের চার্চ’বা ‘স্বর্গীয় জ্ঞানের চার্চ’নামেও ডাকা হয়। সর্বপ্রথম ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সটান্টিয়াস, বাইজেন্টাইন ব্যাসিলিকা হিসেবে হাজিয়া সোফিয়া নির্মাণের নির্দেশ দেন। সে সময় ইস্তাম্বুল শহরটির নাম ছিল কন্সটান্টিনোপল। সম্রাট কন্সটান্টিয়াসের বাবা, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট, প্রথম কন্সট্যান্টাইনের নামানুসারেই শহরটির নামকরণ করা হয়েছিল। প্রথম নির্মিত হাজিয়া সোফিয়ার ছাদ ছিল কাঠের তৈরি। 

৯০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের এই ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে হাজিয়া সোফিয়া। ত্রয়োদশ শতকে মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে সংগঠিত ক্রুসেডে হাজিয়া সোফিয়া কিছু সময়ের জন্য রোমানদের দখলে চলে যায়। সে সময় এটি রোমান ক্যাথলিক ক্যাথেড্রাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিছুকাল। যত দিনে বাইজেন্টাইনরা পুনরায় এই স্থাপত্যের দখল ফিরে পায়, ততদিনে এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাই বাইজেন্টাইন শাসকগণ আবারও মেরামত করে তাদের সাধের প্রার্থনালয়ের পুরনো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনেন।

অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের একশ বছরেরও বেশি সময় পরে আজও রাজনীতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে হাজিয়া সোফিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ। কামাল আতাতুর্ক তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নয় বছর পরে, ১৯৩৫ সালে হাজিয়া সোফিয়াকে একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। তখন বাইজেন্টাইন আমলের বিভিন্ন খ্রিস্টীয় প্রতীক ও ছবি পুনঃস্থাপন করা হয় হাজিয়া সোফিয়াতে। খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের ধর্মের নানা প্রতীক এবং বাণী পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যেতো হাজিয়া সোফিয়াতে। একপাশে মোহাম্মদ, অন্যদিকে আল্লাহ লেখা আবার মাদার মেরির কোলে যিশুখ্রিস্ট সবই ছিল এখানে। সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ধর্ম বিশ্বাসের আশ্চর্য এক সহাবস্থান চোখে পড়ে জাদুঘরটিতে। বিভিন্ন সময়ে হাজিয়া সোফিয়া খ্রিস্টান এবংমুসলিমদের প্রার্থনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে এ স্থাপনাটিতে খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের ধর্মের নানা অনুসঙ্গের সহাবস্থান চোখে পড়ে। এ দুটি ভিন্ন ধর্মের মানুষদের ধ্যান-ধ্যারণা আর চিন্তা-ভাবনা এসে যেন এক হয়ে মিলে গেছে হাজিয়া সোফিয়াতে।

আগামীনিউজ/সোহেল 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে