ঢাকাঃ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষামানের জন্য প্রসিদ্ধ এই শিক্ষায়তন আইভি লীগের সদস্য। এটি ম্যাসাচুসেট্স-এর বোস্টনে অবস্থিত। ১৬৩৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। হার্ভার্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম।
জ্ঞানের জগতে বরাবরই নামকরা যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের উচ্চশিক্ষার শীর্ষপীঠ হিসেবে বিবেচিত। বেশ কঠিন হলেও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে প্রতিযোগিতা করে। হার্ভার্ড কেন বিদ্যাশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রশংসিত এবং কেনইবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে ছুটে আসে, তার বেশ কয়েকটি কারণ বিদ্যমান।
প্রথমত, সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা জোগানো ও গবেষণায়-জ্ঞানে শিক্ষকদের সুখ্যাতি। এখানকার অধ্যাপকরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমুজ্জ্বল। প্রতিষ্ঠানটি নোবেলজয়ী অধ্যাপক ও একাডেমি অব সায়েন্সের অনেক সদস্যকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন থেকে শুরু করে মানবিক সব বিষয়ে এখানে উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন গবেষণা হয়। বিভিন্ন মানদণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে হার্ভার্ড ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে অবস্থান করার নেপথ্যে এটি বিশেষভাবে কাজ করে।
দ্বিতীয়ত, বিখ্যাত স্কলারদের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে জীবন গঠনের সুযোগ। তাদের নীতি-নির্দেশনায় নানা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সফলতার সুযোগ অনেকখানি বেড়ে যায়। যেমন নবীন কোনো গবেষক সাধারণত নোবেলজয়ী কোনো অধ্যাপকের অধীনেই হয়তো তাদের গবেষণা ক্যারিয়ার শুরুর সুযোগ পান। এটি বিশ্বব্যাপী উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীদের এখানে আসার ক্ষেত্রে প্রভাবক ভূমিকা রাখে। নিজেদের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন মেধাবী শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ারে সাফল্য পেতে সবসময় সুদক্ষ পরামর্শদাতা, তত্ত্বাবধায়কের সন্ধানে থাকে। আর এর অবারিত সুযোগ রয়েছে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানটিতে।
তৃতীয়ত, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি আইন, চিকিৎসা, জোতির্বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্বসহ প্রভৃতি বৈচিত্র্যময় স্টাডি প্রোগ্রাম অফার করে। ফলে একজন শিক্ষার্থীর আগ্রহ যা-ই হোক না কেন হার্ভার্ডে তার জন্য অবশ্যই একটা অপশন থাকে।
চতুর্থত, বিশ্বের মধ্যে হার্ভার্ডের একটি টেকসই শিক্ষা তহবিল আছে এবং এর পরিমাণও বিস্ময়জাগানিয়া। টিউশন ফি ও অন্য উৎস, বিশেষত ডোনেশন থেকে পাওয়া বিপুল তহবিল শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোত্তম উপকরণ-শিক্ষাসামগ্রী, গ্রন্থাগার ও অবকাঠামো নিশ্চিতে সাহায্য করে। একই কারণে সর্বোচ্চ মানের গবেষণার পৃষ্ঠপোষকতা জোগাতেও প্রতিষ্ঠানটি সমর্থ। স্বাভাবিকভাবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহীরা হার্ভার্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস ও ভবনগুলো খুব দৃষ্টিনন্দন। কাজেই জীবন বদলে দেয়া শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হার্ভার্ড একটি স্বস্তিকর যাপন অভিজ্ঞতাও প্রদান করে বৈকি।
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার্জনের গৌরব নিশ্চয়ই শিক্ষার্থীদের মনে গভীরভাবে প্রোথিত থাকে। তবে হার্ভার্ডের চেয়ে অন্য কোনো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ ধরনের গৌরব এতটা আছে কিনা সন্দেহ। প্রতিষ্ঠানটি বিখ্যাত সব ব্যক্তিত্বের শিক্ষাতীর্থের ব্যতিক্রমী কারখানা বললে অত্যুক্তি হবে না। প্রেসিডেন্ট, নোবেল বিজয়ী, ব্যবসায়ী নেতা, উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত অভিনয়শিল্পী কে নেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর তালিকায়।
ম্যাসাচুসেটস উপনিবেশিক আইনসভা, জেনারেল কোর্ট, হার্ভার্ড প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। প্রথম বছরগুলোতে হার্ভার্ড কলেজ প্রাথমিকভাবে মণ্ডলী এবং ইউনিটারিয়ান পাদ্রিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, যদিও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত ছিল না।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে এর পাঠ্যক্রম এবং ছাত্র সংগঠন ধীরে ধীরে ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠেছিল এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে হার্ভার্ড বোস্টন অভিজাতদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পর, প্রেসিডেন্ট চার্লস উইলিয়াম এলিয়টের দীর্ঘ মেয়াদ (১৮৬৯-১৯০৯) কলেজ এবং অনুমোদিত পেশাদার স্কুলগুলিকে একটি আধুনিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে; হার্ভার্ড ১৯০০ সালে অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিজ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন।
আগামীনিউজ/সোহেল