Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মৃত ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার জায়েজ?


আগামী নিউজ | ধর্ম ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৩, ১১:২৫ পিএম
মৃত ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার জায়েজ?

ঢাকাঃ প্রিয় মানুষকে সম্মান জানাতে এবং স্মরণীয় করে রাখতে সবাই পছন্দ করে। আর স্মৃতিকে ধরে রাখার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছবি তুলে রাখা। কিন্তু মুমিন ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রত্যেক কাজ ভেবেচিন্তে করতে হয়। দেখতে হয় শরিয়তের অনুমোদন আছে কি না। ভালোবাসা প্রদর্শনস্বরূপ ছবি সংরক্ষণ করা, সেই ছবি ঘরে টাঙিয়ে রাখা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা—এসব কাজ সুন্নাহসমর্থিত নয়।

প্রিয়নবী (স.)- এমনটি করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনি পবিত্র কাবাঘর থেকে মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর ছবি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ তাঁর চেয়ে বেশি কারো অন্তরে ছিল না।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (স.) একবার কাবাঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ইবরাহিম (আ.) ও মরিয়ম (আ.)-এর ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিনি বলেন, তাদের কী হলো? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না। এই যে ইবরাহিমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নির্ধারক অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন! (বুখারি: ৩৩৫১)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) যখন কাবাঘরে ছবিগুলো দেখতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশে তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না। আর তিনি দেখতে পেলেন, ইবরাহিম এবং ইসমাঈল (আ.)-এর হাতে ভাগ্য নির্ধারণের তীর। তখন তিনি বলেন, আল্লাহ তাদের (কুরাইশদের) ওপর লানত করুন। আল্লাহর কসম, এঁরা দুজন কখনো ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করেননি। (বুখারি: ৩৩৫২)

ইসলামের দৃষ্টিতে অহেতুক ছবি তোলা ও তা সংরক্ষণ করা হারাম। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেন যে, (কেয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে। (বুখারি: ৫৯৫০)

এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে এসে বলল, হে আবু আব্বাস, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনে আব্বাস (রা.) তাকে বলেন, (এ বিষয়ে) রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোনো ছবি তৈরি করে মহান আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (একথা শুনে) লোকটি ভীষণ ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে গাছ-পালা এবং যে সকল জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরি করতে পারো। (সহিহ বুখারি: ২০৮৪)

সুতরাং ছবি তোলা এবং তা প্রচার করা নিঃসন্দেহে গুনাহের কাজ। চাই তা মোবাইলে তোলা হোক বা হাতে আঁকা হোক। শুধুমাত্র শরয়ি প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছবির অনুমোদন রয়েছে। কেউ যদি বৈধ কোনো কারণে ছবি তুলে থাকে এবং তার মৃত্যুর পর ভিন্ন কেউ ছবিকে ফেসবুকে দিয়ে দেয়, তাহলে ওই মৃত ব্যক্তির কোনো গুনাহ হবে না। শুধু আপলোডকারীর গুনাহ হবে। তবে মৃত ব্যক্তির সম্মতি থাকলে উভয়ের গুনাহ হবে। 

তাছাড়া মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে কোনো গুনাহের কাজ করা উচিত নয়। কোনো ক্ষেত্রে তা মৃত ব্যক্তির জন্য কষ্টের কারণ হয়। ওমর (রা.) সূত্রে নবী (স.) বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য কৃত বিলাপের বিষয়ের ওপর কবরে শাস্তি দেওয়া হয়। (বুখারি: ১২৯২)

তাই প্রিয় মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে তাকে বিপদে ফেলে দেওয়া কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকলকে গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


আমল

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে