Dr. Neem on Daraz
Victory Day

শবে কদরে নামাজের নিয়ম


আগামী নিউজ | ইসলাম ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম
শবে কদরে নামাজের নিয়ম

ঢাকাঃ লাইলাতুল কদর। মহিমান্বিত এক রাত। যে রাতকে আল্লাহ তাআলা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলেছেন। পবিত্র কোরআনের সুরাতুল কদরে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (সুরা কদর: ১-৫)

এই রাতকে আল্লাহ তাআলা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলেছেন। এক হাজার মাস মানে ৮৩ বছর ৪ মাস। সুতরাং ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতের সওয়াব এই কদরের রাতের ইবাদতেই মহান আল্লাহ প্রদান করে থাকেন। এছাড়াও অতীতের সকল গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার জন্য লাইলাতুল কদর সর্বোত্তম সময়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫) 

বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতে শবে কদরের সম্ভাবনা থাকলেও ২৭ রমজানে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল, ২০২৩) বাংলাদেশে ২৬ রমজান। সন্ধ্যা নামলে ২৭ রমজানের রাত বা কদরের রাত শুরু হবে। আলেমদের বড় একটি জামাত ২৭ রমজানের রাতেই শবে কদর হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। উবাই ইবনু কাব (রা.), ইবনু আব্বাস (রা.), উমর (রা.), ইমাম আবু হানিফা (রহ)-সহ অনেকেই রয়েছেন এই মতের পক্ষে। তাদের অন্যতম দলিল হলো, সাহাবি উবাই ইবনু কাব (রা.) কসম খেয়ে বলতেন, ২৭তম রাতটি লাইলাতুল কদর। (মুসলিম: ২৬৬৮)

পুরো রমজানের মূল আকর্ষণ হলো শবে কদর। এ রাতকে ঘিরেই সবকিছু। কেননা এ রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি একে অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে।’ (সুরা দুখান: ৩) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি একে কদরের রাতে নাজিল করেছি।’ (সুরা কদর: ০১)

রাসুলুল্লাহ (স.) কদরের রাতে সারারাত ইবাদত-বন্দেগি করতেন এবং পরিবারের সবাইকে ইবাদত করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। বছরের অন্য কোনো রাতে সারারাত জেগে ইবাদত করার ব্যাপারে এত বেশি গুরুত্ব নবীজির জীবনীতে দেখা যায় না। সাধারণত তিনি এশার নামাজের পরে বেশি দেরি করতেন না, দ্রুত ঘুমিয়ে যেতেন এবং মধ্যরাতে জেগে ইবাদত করতেন। কিন্তু শবে কদরে তিনি সারারাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারের অন সদস্যদেরও উদ্বুদ্ধ করতেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী কারিম (স.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি: ১০৫৩)

শবে কদরে যেভাবে নামাজ পড়বেন
কদরের রাতে জামাতের সাথে মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ আদায় করা খুব জরুরি বিষয়। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম: ৬৫৬) 

এরপর সারারাত যত পারেন নফল নামাজ পড়বেন। কিয়ামুল্লাইল করবেন। কিয়ামুল্লাইল বা রাতের দীর্ঘ নফল নামাজে কোরআন তেলাওয়াত ও সেজদা যত পারেন সুদীর্ঘ করবেন। শবে কদরে কিয়ামুল্লাইল এতই গুরুত্বপূর্ণ আমল যে, শব্দটির সঙ্গে কদর শব্দটি জুড়িয়ে দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। সহিহ বুখারির বর্ণনায় তিনি ইরশাদ করেছেন,  مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمانًا واحْتِسَابًا، غُفِر لَهُ مَا تقدَّم مِنْ ذنْبِهِ - متفقٌ عَلَيْهِ ‘কদরের রাতে যে কিয়ামুল্লাইল করে বিশ্বাস নিয়ে এবং নাজাতের প্রত্যাশায়, আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুত্তাফাকুন আলাইহ) 

সুতরাং আমরা যেন কদরের রাতে কিয়ামুল্লাইল বা লম্বা সময় ধরে সালাত আদায় করি। নবীজির কিয়ামুল্লাইল সম্পর্কে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নামাজে দাঁড়িয়ে নবীজি এত দীর্ঘ সময় তেলাওয়াত করতেন যে, তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত।’ (দ্রষ্টব্য- সহিহ মুসলিম: ২৮১৯, ২৮২০)

নফল নামাজের নিয়ম হলো— দুই দুই রাকাআত করে যত বার ইচ্ছা পড়া যায়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘রাতদিনের (নফল) নামাজ দুই দুই রাকাত।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১২১০)

প্রথমে অজু করে পবিত্র হয়ে দুই রাকাআত নফল নামাজের নিয়ত করবেন। নিয়ত আরবিতে করা বাধ্যতামূলক নয় এবং তা সুন্নতও নয়। নিয়ত করতে হয় মনে মনে। যদি সংকল্প করেন যে ‘আমি দুই রাকাত নফল পড়ার জন্য কেবলামুখী হলাম আল্লাহু আকবর’ এতেই নিয়ত হয়ে যাবে। এরপর (আল্লাহু আকবর বলে) হাত বেঁধে সানা পাঠ করতে হবে। এরপর সুরা ফাতিহা পাঠ করে যে কোনো একটি সুরা পাঠ করতে হবে। এরপর রুকু করতে হবে। রুকুর তাসবিহ পড়া শেষ করে আল্লাহু আকবর বলে একটু দাঁড়িয়ে থেকে সিজদায় যেতে হবে। দুই সিজদা সম্পন্ন করে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাআতের মতোই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করতে হবে। এরপর শেষ বৈঠকের মাধ্যমে নামাজ শেষ করতে হবে।

নফল নামাজ বাসা-বাড়ি, মসজিদ সব জায়গায় পড়া যায়। তবে মসজিদের তুলনায় বাসা-বাড়িতে নফল নামাজ পড়া উত্তম। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘ফরজ ব্যতীত উত্তম (নফল) নামাজ হলো ঘরে নামাজ আদায়।’ (বুখারি: ৭৩১)

মনে রাখতে হবে শবে কদরের জন্য বিশেষ নিয়মে কোনো নামাজ নেই। সাধারণ নফল নামাজ, সালাতুস তাসবিহ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, তাহাজ্জুদ, দোয়া, মোনাজাত সবকিছু করবেন। ভুলেও অতি উৎসাহি হয়ে শরিয়তের অনুমোদন নেই—এমন কোনোকিছুতে যোগ দেবেন না। কদরের নামাজে বিশেষ সুরা পড়তে হবে-এমন কথা লোকমুখে প্রচলিত আছে। এর কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। অনেকে তিন বার করে সুরা পড়েন। এসব বিশুদ্ধ পদ্ধতি নয়, জরুরি বা বাধ্যতামূলকও নয়। নিজের মতো করে দোয়া করবেন, নামাজে সুরা কেরাত পড়বেন অন্য সময়ের নফল নামাজের মতো। 

উল্লেখ্য, কদরের রাতটি মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত। যারা এমন মহান রাত অবহেলায় কাটিয়ে দেয় তারা হতভাগা ছাড়া অন্যকিছু নয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এ মাসে (রমজানে) এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসায়ি: ২১০৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এই মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদর নসিব করুন। সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

বুইউ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে