ঢাকাঃ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা রোজার প্রতিদান নিজ হাতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রমজানে রোজাদার বান্দার নেক আমল করার সুবিধার্থে শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন— ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শেকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ হয় না এবং একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি! অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ! থেমে যাও। আল্লাহ (রমজানের) প্রতিটি রাতে অনেক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৮, ১৮৯৯,৩২৭৭; মুসলিম: ১০৭৯)
হাদিস অনুযায়ী রমজানের প্রথম রাতেই শয়তানকে শেকলবন্দি করা হয়। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, এরপরও রমজানে মানুষ পাপাচার করে কীভাবে? হাদিসবেত্তারা এর বেশ কিছু জবাব দিয়েছেন।
১) কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, শয়তান শেকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক-রূপক উভয় উদ্দেশ্যেই হতে পারে। রূপক অর্থে উদ্দেশ্য হলো, রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় ও মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এ অর্থে উল্লেখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। (ইকমালুল মুলিম: ৪/৬)
আর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে হাদিসের অর্থ—মানুষ পাপ করে দুই কারণে। এক. তার কুপ্রবৃত্তির কারণে। দুই. শয়তানের প্ররোচনায়। রমজানে শয়তান বন্দি থাকলেও কুপ্রবৃত্তির কারণে মানুষ পাপ করে থাকে। (ফাতহুল বারি: ৪/১১৪)
২) আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, শয়তানকে ওসব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ নাও রাখা হতে পারে। (উমদাতুল কারি: ১০/২৭০)
৩) রমজানের আগের পাপের প্রভাবে মানুষ রমজানে পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘক্ষণ আগুনে রাখার পর তার প্রভাব বাকি থাকে। একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছু দূর পর্যন্ত চলতে থাকে। ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারো কারো কাছ থেকে পাপ হয়ে থাকে।
৪) কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, খুব দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। (ফাতহুল বারি: ৪/১১৪)
৫) আল্লাহ তাআলা সুরা নাসে বান্দাদেরকে মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে, যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। রমজানে জিন শয়তানকে বন্দি রাখা হলেও মানুষরূপী শয়তানদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
৬) কেউ কেউ বলেন, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপাচার করে। (বিস্তারিত দেখুন: শরহুন নববি আলা মুসলিম: ৭/১৮৭, শরহুস সুয়ুতি আলা মুসলিম: ৩/১৮৩, মিরকাতুল মাফাতিহ: ৪/১৩৪১, ফয়জুল বারি: ৪/৩২৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজানে কুপ্রবৃত্তি, জিন ও মানুষ শয়তানের প্রভাবলয় থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএম