ঢাকাঃ রাজধানীর ধানমন্ডিতে ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন নায়ক রিয়াজের শ্বশুর ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান (৫৮)।বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের একটি বাড়ির লেভেল-৫ এর একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে তিনি বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। সে সময় জীবনের নানান হতাশা ও দুঃখের কথা তিনি তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমি মহসিন। ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো এক সময় আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছুই নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো, মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, সেটা শেয়ার করলে হয়তো সবাই জানতে পারবে, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবে।
তিনি বলেন, গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার এক ছেলে আমেরিকায় থাকে, মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। কষ্ট লেগেছে।
আজকে আমার আরেক খালা মারা গেছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তার তিনটা ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন–কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলব, এই খালা অনেকটা লাকি।
আবু মহসিন বলেন, আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি। তাই লাইভে আসা।
গত করোনা শুরুর আগে থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকেন, তারাই একমাত্র বলতে পারেন বা বোঝেন।
এরপর আর কিছু কথা বলেই মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তিনি গুলি করেন। চেয়ারেই পড়ে থাকে তার নিথর দেহ।
এ ঘটনার পর ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বলেন, নিজের অস্ত্রের গুলিতে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাস্থলে আমরা আছি। সিআইডির ফরেনসিক টিমসহ আমাদের ইউনিট কাজ করছে। মরদেহের প্রাথমিক কাজ শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হবে।
অস্ত্রটি বৈধ ছিল কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, তার অস্ত্রটি বৈধ।
এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ভবনের কেয়ারটেকার মো. গোলাম রাব্বী বলেন, মহসিন খান ওই বাসায় একা থাকতেন। তার বাসায় কোনো কাজের বুয়া বা ড্রাইভার ছিল না। একাই রান্নাবান্না করে একাই থাকতেন। আবার অনেকসময় বাইরে থেকে খাবার আনাতেন। তার একটা প্রাইভেটকার আছে। সেটা তিনি নিজেই ড্রাইভ করতেন।
রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নিহতের স্ত্রী-সন্তান অস্ট্রেলিয়া থাকেন। আমরা জানতে পেরেছি ধানমন্ডির বাসায় তিনি একা থাকতেন। ব্যবসা-বাণিজ্যেও লোকসান করেছেন। ২০১৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে জেনেছি। এসব কারণে হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে পুলিশ ধারণা করছে।
আগামীনিউজ/বুরহান