ঢাকাঃ প্রবাসীদের সুবিধার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের যারা প্রবাসে যান, সবাই কিন্তু সঠিকভাবে যান না। কোনও দালাল-টালাল ধরে, বাড়িঘর বিক্রি করে, সব বন্ধক রেখে তারপরে যান। তারপরে যে আশা নিয়ে তারা যান, সেই বেতন তারা পান না। ফলে অনেককেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। কষ্ট ভোগ করতে হয়। যে বেতনের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়, যাওয়ার পরে সেই বেতনও পান না। কিংবা কাজও পান না। থাকা ও খাওয়ার জায়গা নিয়ে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়।’
মালদ্বীপ থেকে দেশে টাকা পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসীরা তাদের সমস্যার কথা জানান প্রধানমন্ত্রীকে। তাদের সেই সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আমরা করেছি। কিন্তু আমার অবাক লাগে, আপনাদের (প্রবাসী) ডলার কিনে তারপরে টাকা পাঠাতে হয়। এটা কেন পাঠাতে হয় আমি জানি না। দেশে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলাপ করবো। মালদ্বীপের সঙ্গে আমাদের টাকার বিনিময় কী? কীভাবে সেটা করা যায়। এটা করা খুব একটা সমস্যা হবে না।’
প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন। আমাকেও জানিয়েছেন তারা। দেশে ফিরে যাওয়ার পরে অনেক বিষয়ে আমরা কী কী করা যেতে পারে, তা করবো।’
তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপে বাংলাদেশের পণ্যের ভালো বাজার রয়েছে। তাদের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। এখানে কী কী পণ্য আমরা রফতানি করতে পারি, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
বিমানের জন্য দুটি কার্গো কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের নিজস্ব কোনও কার্গো নেই। ভাড়া করেই চলে। বিমানের জন্য দুটি কার্গো কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে অসুবিধা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে কিনবো। এটা হলে মালপত্র পাঠাতে খুব বেশি সমস্যা হবে না।’
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে যাতে প্রবাসীরা অর্থ পাঠাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা সরকার করবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমরা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থা করে দেবো, যেন ডলার কিনে দেশে টাকা পাঠাতে না হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডাটাবেজ থেকে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রবাসে যাবেন। জমি, বাড়ি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার দরকার নেই। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তৈরি করেছি, বিনা জামানতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের ঋণ দিতে। এই ব্যাংক করতে সরকার থেকে ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগও দিয়েছি।’
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের এখানে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল করা সম্ভব হবে কিনা জানি না। মালদ্বীপ সরকার এখানে আমাদের জমি দেবে কিনা তাও জানি না। তবে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও শিক্ষায় আরও বেশি বৃত্তি ও সুবিধা আমরা দেবো।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে বেসরকারি খাতে বিমান চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি বিমান (ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস) মালদ্বীপে আসা শুরু করেছে। সরকারি বিমানেও মালদ্বীপের সঙ্গে যাতায়াতের ব্যবস্থা করবো। এটা আমাদের লক্ষ্য আছে। এতে প্রবাসীদের সুবিধা হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সরাসরি খুন করেছে, তাদের বিচার আমরা করতে পেরেছি। ইনডেমনিটি অডিন্যান্স বাতিল করেছি ক্ষমতায় (১৯৯৬) এসে। অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে। এমনকি যেদিন মামলার রায় হবে, সেদিনও খালেদা জিয়া হরতালের ডাক দিয়েছিল। জজ সাহেব যাতে কোর্টে যেতে না পারেন, বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপরও সেই রায় হয়েছে। আমরা খুনিদের বিচার করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। বারবার আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কতবার আমাকে বন্দি করেছে। এমনকি আমাকে ডিজিএফআই সেনানিবাসে নিয়ে গিয়েছিল জবাব শোনার জন্য। জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, এসবে কোনও পাত্তা দেইনি। ভয় পাইনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে চলার দেশ না। নিজের পায়ে চলার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। ১৯৯৬ সালের আগে যারা প্রবাসে ছিলেন, তারা ভেবে দেখেন—তখন কী চোখে দেখতো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়নের পরে এখন এই দেশের মানুষ কোন চোখে দেখে। যারাই বিদেশে আছেন তাদের সম্মানের চোখে দেখে। এখন আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে সাহস পায় না। এখন আর ধুর ধুর ছাই ছাই করে না। ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখতে সাহস পায় না। এখন দেশের মানুষ সাহস নিয়ে চলে। এখন আমরা দরকষাকষি করেও চলতে পারি।’
দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী তার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি থেমে থাকিনি। আমার তো বয়স হয়ে গেছে। যেকোনও সময় চলে যেতে হতে পারে। তাছাড়া আমার ওপর তো খড়গহস্ত আছেই। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। বোমা, গুলি, গ্রেনেড সবই হয়েছে। সবই হজম করে ফেলেছি। কারণ, আমি তো জাতির পিতার মেয়ে। কাউকে ডরাই না। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আছে। দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে দেশে ফিরে এসেছি।’
প্রবাসীদের পক্ষে বক্তব্য দেন মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল মাতবর। তিনি তার বক্তব্যে প্রবাসীদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দূতালায় প্রধান মোহাম্মদ সোহেল পারভেজ, সোহেল রানা, মালদ্বীপে বাংলাদেশি শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে আহমেদ মুক্তাদী, মালদ্বীপে বাংলাদেশি শিক্ষক, চিকিৎসক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
আগামীনিউজ/বুরহান