ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শুরু হয়েছে সকাল ৮টায়। এর আগেই প্রায় অর্ধশত কেন্দ্র দখল করার অভিযোগ করেছে বিএনপি।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোটগ্রহণ শুরু হবার পর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ইশরাক হোসেনের মিডিয়া সেলের প্রধান খুরশিদ আলম আগামী নিউজকে জানান, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যা খবর পাওয়া গেছে তাতে অর্ধশতাধিক কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে।
১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৫৫, ৫৬, ৫৭ বিএনপির সব এজেন্ট বের করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কলাবাগানে ১৭ নাম্বার ওয়ার্ডে দুজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন রাজীব ও আনোয়ার। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জরিনা শিকদার স্কুলের এক এজেন্ট রাজীব হোসেনকে আটক করেছে।
৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মো. নুরুল হুদা আমাদের জানিয়েছেন, ১৩২ চিলড্রেন হোমস কেন্দ্র থেকে আমাদের পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোড়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দিয়েছে। দক্ষিণের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানবাড়ি কেন্দ্রে মগবুল ইসলাম টিপুর ও বিএনপির এজেন্টদের বের করে মারধর করা হয়েছে। এতে আরিফ নামের একজন এজেন্টকে বেশি মারধর করা হয়েছে।
তিনি জানান, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ সাহেব লেনে সেন্ট জোসেফ টেকনিক্যাল স্কুল কেন্দ্রে কিরন নামক একজন ভোটার জানান, ভোটার আইডি শো করার পরই ভোট দিতে গেলে ভিতর থেকে তাকে জানানো হয়, ‘আপনার ভোট হয়ে গেছে’। তার স্ত্রীর ভোট প্রদানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। নিজের ভোট দিতে না পেরে দুজনে ফেরত এসেছেন।
৪৯নং নারিন্দা মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা বিএনপির পোলিং এজেন্টদের মেরে বের করে দিয়েছেন।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের সেগুনবাগিচা হাই স্কুল, আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এবং বেগম রহিমা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএনপির কোনো এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।
কলাবাগান, নিউ মার্কেট, হাজারীবাগ, শাহাবাগ, ধানমণ্ডি, কামরাঙ্গীরচর থানাধীন বেশিরভাগ কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
মিডিয়া সেলের প্রধান খুরশিদ আলম জানান, ১৬ নাম্বার ওয়ার্ডে কাঁঠালবাগান খান হাসান স্কুলে প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি এজেন্টদের নিয়ে কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের ওপর প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালায়। পরে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়।
অপরদিকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে এজেন্টসহ প্রার্থীকে বের করে দেয়া হয়। পরে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী প্রার্থীর ওপর হামলা করে। এতে প্রার্থী জাহাঙ্গীর পাটোয়ারীসহ তিনজন আহত হন।
২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম স্বপন অভিযোগ করে বলেন, সকালে আমার এবং আমাদের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের এজেন্ট ঢুকতে চাইলে তাদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়। কারা ঢুকতে দিচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতনের লোকজন আমাদের কোনো এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। তার একজন এজেন্টকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এছাড়া সরেজমিন ঢাকা কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট নেই। ৪৮ নং ওয়ার্ডের কোনো কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মানিকনগর প্রাইমারি স্কুল, মানিকনগর শের-ই-বাংলা মডেল হাই স্কুল, মুগদা প্রাইমারি স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিংপুল, কমলাপুর প্রাইমারি স্কুল, সেগুনবাগিচা ২ নম্বর হাই স্কুল খিলগাঁও, তিলপাপাড়া, তালতলা এলাকার কেন্দ্রসহ অর্ধশত ভোটকেন্দ্রে কোথাও বিএনপি সর্মথিত মেয়র প্রার্থী কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীর বুথ বা পোলিং এজেন্ট নেই।
সেগুনবাগিচা দুই ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট সিরাজুল ইসলাম সামসু জানান, সকাল বেলাই তাদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। এ সময় একজন কর্মীকে মাথায় গরম পানি ঢেলে দিয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। তারা সাহায্যের জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি করলেও কোথাও পুলিশ দেখতে পাননি।
এ ঘটনায় সাহাবুদ্দিন (২৫) জানান, সেগুনবাগিচা ২-এর ৩৭৫ নম্বর কেন্দ্রে তিনি পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করতে গেলে প্রথমেই তাদের বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তাকে পাশের গলিতে নিয়ে মারধর করা হয়। এছাড়া চায়ের দোকানের সদ্য দেয়া ফুটন্ত চায়ের পানি তার মাথায় ঢেলে দেয়।
কার্জন হলের পোলিং এজেন্টপ্রধান শাহবাগ থানার যুবদলের সেক্রেটারি আরিফুল হক চঞ্চল বলেন, কার্জন হল থেকে তাদের ৬ জনকে বের করে দেয়া হয়েছে। এর আগে তারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে উপস্থিত স্বাক্ষরের জন্য তিনি স্বাক্ষর নেননি বলেও অভিযোগ করেন।
আরিফুল হক বলেন, তাদের ৬ পোলিং এজেন্টকে প্রচণ্ড মারধর করে বের করে দিয়েছে। তবে যারা মারধর করেছে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য নন, বহিরাগত বলেও অভিযোগ করেন।
মানিকনগর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কোনো বুথই নেই। স্থানীয় বিএনপির নেতা মো. মাসুদ বলেন, সকালে তাদের কেন্দ্রেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিএনপির কাউকে দেখলেই মারধর করছে। এমনকি ভোটকেন্দ্রেও সবাইকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। পরিচিত দুয়েকজনকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে যারা ভোট দেবে এমনটা নিশ্চিত হয়ে।
বিভিন্ন জায়গা থেকে কেন্দ্র দখল ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার খবর আসছে, বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন ইশরাকের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা খুরশিদ আলম।
আগামীনিউজ/ডিএম/আরআর/এনএ/ এনএনআর