গত ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে এক সমাবেশে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে গ্রেফতার সব নেতাকর্মীকে মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছিল হেফাজত। সেই সময়ের মধ্যে হেফাজতের কয়েকজন নেতা মুক্তি পেয়েছেন। তবে মাওলানা মামুনুল হকসহ কয়েকজন এখনো কারাগারে আছেন। তাদের মুক্তির দাবি জোরালো করতেই মূলত নির্বাচনের আগে মাঠে নামছে আলোচিত এই সংগঠনটি।
গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে জামিয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদ মাদরাসা মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে মাওলানা মামুনুল হকসহ অনেক আলেমকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের ন্যূনতম সম্মান দেখানো হচ্ছে না। তারা যতটুকু আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখেন, সে ক্ষেত্রেও অন্যায়ভাবে বৈষম্য করা হচ্ছে। আলেম সমাজের সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকার নির্মমভাবে হরণ করা হচ্ছে।
সভায় আলেমদের সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ অতিসত্ত্বর বন্ধ করা, কারাবন্দী আলেমদের মুক্তি এবং ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মাহফুজুল হক, মুহিউদ্দিন রাব্বানী, আবদুর রব ইউসুফী, নাজমুল হাসান কাসেমী, জুনাইদ আল হাবিব, মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ফজলুল করিম কাসেমী, মনির হোসাইন কাসেমী, আতাউল্লাহ আমিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে ২০১০ সালে। প্রতিষ্ঠার পরপর সরকারের প্রণীত নারী নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে আলোচিত হয় সংগঠনটি। তবে এর মূল উত্থান ঘটে ২০১৩ সালে। শাহবাগের গণজাগরণের মঞ্চকে নাস্তিকদের মঞ্চ আখ্যায়িত করে পাল্টা কর্মসূচি দেয় হেফাজত। ওই বছরের ৬ জুলাই রাজধানীর শাপলা চত্বরে লাখ লাখ লোকের গণজমায়েতের মাধ্যমে দেশে বিদেশে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় হেফাজত। ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রায় সবাই এই হেফাজতের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করে।
তবে এর ঠিক এক মাস পর ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ, শাপলা চত্বরে অবস্থানকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় হেফাজত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে রাতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বর ছাড়তে বাধ্য হন। সেই অভিযানে নিজেদের কয়েকশ লোক হতাহত হয় বলে দাবি হেফাজতের।
এই ঘটনার পর হেফাজত অনেকটা চুপসে যায়। তবে বছর তিনেক পরে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে হেফাজতের তৎকালীন আমির আল্লামা শফীর। যা তার মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর নতুন আমির হন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। তার কমিটিতে বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতারা পদ পান বলে অভিযোগ ওঠে। এতে সরকারবিরোধী অংশটি সরব হয়ে ওঠে। ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঠেকাতে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনে নামে। এতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয় এবং বেশ কয়েকজন মারাও যান।
এই ঘটনার পর সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামে। আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ অর্ধশতাধিক হেফাজত নেতা গ্রেফতার হন। এতে দ্বিতীয়বারের মতো চুপসে যায় হেফাজত। এক পর্যায়ে সরকারের চাপে কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হয়। তবে সেই কমিটি তেমন উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। চলতি বছর নতুন করে কমিটি সম্প্রসারণ করা হয়, যেখানে সারাদেশ থেকে দুই শতাধিক আলেমকে পদায়ন করা হয়েছে। আগের কমিটিতে বাদ পড়া কথিত বিতর্কিত অনেককে নতুন করে নেওয়া হয়েছে।
এমআইসি