ঢাকাঃ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে দুই দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বুধবার (১৬ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা আজ দুপুরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তার গায়েবানা জানাজায় হামলা, ফুরকান উদ্দীনকে হত্যা করার প্রতিবাদে ধর্মীয় অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং সংবিধানে বর্ণিত অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতার পরিবর্তে বাধাদান, গ্রেপ্তার ও পুলিশিরে গুলিতে আহত করার প্রতিবাদে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সারা দেশে দোয়া, বুধবার (২৩ আগস্ট) সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করা হবে।
জামায়াত আমির বলেন, আল্লামা সাঈদীর নামাজে জানাজা পিরোজপুরে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় যাতে জনগণ অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে জন্য সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আশপাশের জেলাগুলোর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। লোকজনকে আসার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত জানাজা সম্পন্নের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। প্রিয় নেতার শেষ বিদায়ে লাখো জনতা কান্নায় ভেঙে পড়ে। পৃথিবীর কোনো অমুসলিম দেশেও জানাজায় বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
গায়েবানা জানাজায় হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়। বাংলাদেশর বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম মহানগরী যেখানে আল্লামা সাঈদী কয়েক যুগ ধরে কোরআনের তাফসির করে আসছেন, সেই চট্টগ্রামের ইসলাম প্রিয় জনতা ঐতিহাসিক জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে গায়েবানা জানাজার উদ্যোগ নিলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে। পুলিশের গুলিতে ২০ জনের বেশি লোক আহত হন। পুলিশ প্রায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। কক্সবাজার জেলা সদর ও চকরিয়া উপজেলায় আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাজার আয়োজন করা হলে সেখানেও পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশের গুলিতে চকরিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফোরকান উদ্দিন নিহত হন ও বেশ কয়েকজন আহত হন।
সিলেটে স্মরণকালের ঐতিহাসিক গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, সিলেট জানাজা শেষে সেখান থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সারা দেশে বাড়িতে বাড়িতে ব্যাপকভাকে তল্লাশি চালিয়ে সাঈদী ভক্তদের হয়রানি করা হয়। গত দুই দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বগুড়া ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা এই অন্যায় গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধা দিয়ে এক ন্যক্কারজনক ঘটনার অবতারণা করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে ১৪ আগস্টের ঘটনা যেভাবে বিকৃত করেছেন, তাতে গোটা জাতি বিস্মিত হয়েছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ১৬ আগস্ট জামায়াতকে গায়েবানা জানাজা করতে দেয়া হবে না। জনগণের প্রশ্ন ইসলামের বিধান জানাজা, গায়েবানা জানাজার অনুমতি দেওয়ার তিনি কে? পুলিশ কমিশনারের এই রাজনৈতিক বক্তব্য জনগণ প্রত্যাখ্যান করছে।
বুধবারে বায়তুল মোকাররমের জানাজা স্থগিতের বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ১৫ আগস্ট বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের পক্ষ থেকে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করা হয় এবং তাতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করে, তাই আজ ১৬ আগস্ট আলাদাভাবে জানাজার অনুষ্ঠান আয়োজনের কোনো প্রয়োজন নেই।
সাঈদির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সমগ্র বিশ্বে এক নন্দিত ব্যক্তি। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি কাবা ঘরের ভিতরে প্রবেশের সৌভাগ্য অর্জন করেন। সারা পৃথিবীতে তিনি মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বাণী পৌঁছে দিয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি দেশ তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করেছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নিজ এলাকা থেকে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিসহ জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তিনি একাধিকবার স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে তিনি কুরআনের তাফসির করেননি। বহু উপজেলায়ও তিনি কুরআনের তাফসির করেছেন। তার তাফসির শুনে হাজার হাজার যুবক আল্লাহর পথে পরিচালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের জীবনকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করেছে। বহু অমুসলিম ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি হাজার হাজার মানুষের জানাজার ইমামতি করেছেন। অথচ মৃত্যুর পর তার জানাজায় জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। পুলিশের এ ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
সাঈদীর ইন্তিকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে শোক প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, হারামাইন শরিফাইনের ইমাম আবদুর রহমান সুদাইসি আল্লামা সাঈদীর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে শোক বার্তা পাঠিয়েছেন। তুরস্কের ঐতিহাসিক ফাতিহ মসজিদে এবং আঙ্কারার প্রাণকেন্দ্র হাজি বায়রাম ভেলি মসজিদে আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লন্ডন, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রদেশ, মক্কা-মদিনা, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা দুনিয়ায় আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান, ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম-ওলামা, দেশের বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরা শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। আমরা তাদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বুইউ