ঢাকাঃ দলের ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে। এর আগে দলের মনোনয়নে এমপি পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া হলেও এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলটি।
গতকাল তিনটি উপনির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব আসনে প্রয়াত এমপিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী, ভাইসহ অনেকেই মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত কেউই পাননি।
বিগত কয়েক বছর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য ও পরীক্ষিতদের বদলে এমপি পরিবারের কাউকে বাছাই করা হয়েছে। পরিবারের যোগ্য কেউ না থাকলে অন্য কাউকে বেছে নেওয়া হয়। সর্বশেষ গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পরিবারকে প্রাধান্য দিয়ে মনোনয়ন দিতে হয়েছে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যতগুলো উপনির্বাচন হয়েছে তার অধিকাংশতেই এমপি পরিবারের বাইরে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির সংসদীয় বোর্ডের এক সভায় এসব নেতাকে আসন্ন উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বৈঠকে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান প্রমুখ অংশ নেন।
সূত্রমতে ঢাকা-১৪ আসনে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঢাকার আদি বাসিন্দা ও শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টুর প্রতি সমর্থন জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আগা খান মিন্টু স্বাধীনতার আগে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাবনা-৪, ঢাকা-৫, নওগাঁ-৬, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয় যথাক্রমে নুরুজ্জামান বিশ্বাস, কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, আনোয়ার হোসেন হেলাল ও হাবিব হাসানকে। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী) আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ২৪ বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মরহুম শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। গত বছরের ২ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করায় আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে মনোনয়ন পান পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস। যদিও ডিলুর স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, জামাইসহ পরিবারের আটজন সদস্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কদমতলী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা পাঁচবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান হাবিবুর রহমান মোল্লা। চারবার তিনি জয়ী হন। তাঁর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পান যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। আসনটিতে মোল্লার ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল মনোনয়নের দাবিদার ছিলেন।
ফরিদপুর জেলা কমিটির ওপর ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনাঃ ফরিদপুর জেলা কমিটির ওপর আবারও ক্ষুব্ধ হলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে জেলা সভাপতি সুবল সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হেসেনের মধ্যে বিরোধ চলছে। তাদের মিল না হলে প্রয়োজনে জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এ নির্দেশ দেন সভানেত্রী। ওই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয় করার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। বিরোধ নিষ্পত্তি, সমন্বয় করার চেষ্টা বিফলে গেলে সিনিয়র সহসভাপতিকে আহ্বায়ক করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে দিতে বলেন তিনি।
করোনাকালে নির্বাচনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগঃ মনোনয়ন বোর্ডের সভায় করোনা পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরনের নির্বাচন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশের দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে মনোনয়ন বোর্ডের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময় নির্বাচনের কারণেই ভারতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর হস্তক্ষেপ করবেন না তাঁরা।