রাঙামাটিঃ দেশের করোনার প্রার্দুভাব ও সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধিতে দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগষ্টে সকল পর্যটন স্পট খুলে দেয়ায় পাহাড়ি অঞ্চলে এখন পর্যটকদের অনেকটা ভীড় দেখা যাচ্ছে। ১৯ আগষ্টের পর পর্যটন স্পটগুলোকে উম্মুক্ত করায় রাঙামাটির পাহাড়ি এলাকার পিকনিক স্পটগুলোতে পর্যটকদের আগমন ঘটছে। পাহাড়ি অঞ্চলের সুভলং ঝর্ণা, ঘাগড়া ঝর্ণা, বিলাইছড়ির গাছ কাঁটা ছড়া ঝর্ণা, কাপ্তাই লেক, রাঙামাটির সাজেক ভ্যালী, পেডা টিং টিং। সব ক’টির মধ্যে ঘাগড়া ঝর্ণাটি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের একেদম সন্নিকটে অবস্থিত। এ ঝর্ণাটি পর্যটন কর্পোরেশন বা সরকারের সহযোগিতা পেলে পুরো বর্ষা ও শীত মৌসুমটি গড়ে উঠতে পারে নৈস্বর্গিক রুপে রুপায়িত হতে পারে এক সৌন্দর্য্য পর্যটন পিকনিক ষ্পট।
রাঙামাটির ঘাগড়া সুবিশাল পাহাড়ি ঝর্ণা। রাস্তা থেকে ঝর্ণায় পৌঁছাতে গেলে কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট লাগবেই। রাস্তায় দু’দিকে দু’টি পাহাড়ে ঘেরা ঝর্ণাটি দাঁড়িয়ে আছে তার বিস্তৃত রূপ ছড়িয়ে। ঝর্ণার পাশে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি-বাঙ্গালী পরিবারের বসতি রয়েছে। ঝর্ণায় গেলে অবশ্য নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। এলাকার লোকজন সাধারণত পর্যটকদের বিরক্ত করে না। তারা খুবই বিনয়ী মনোভাব পোষণ করেন। তাছাড়া পাশেই রয়েছে সেনাবাহিনীর জোন অফিস।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলাধীন ঘাগড়ায় এই ঝর্ণায় শীত মৌসুমে তো বটেই, অন্যান্য ঋঁতুতেও পানি খুবই শীতল থাকে। তাই হঠাৎ গোসল করলেই সর্দি কাঁশি, গলা ব্যাথাসহ জ্বর হওয়ার সম্ভবনা ও উড়িয়ে দেয়া যায় না। ঝর্ণাটির উচ্চতা ভূ-পৃষ্ট থেকে কমপক্ষে ২০০ফুট উপরে। উপর হতে নিচে পানি পড়ার ঝিরঝির শব্দ দেখাটা যেমন, তেমনি শুনতেও অসাধারণ। ঝর্ণার দিকে যাওয়ার পথটি ধরে গেলে এভারেষ্ট শৃঙ্গের কথা মনে পড়ে যাবে। রোমাঞ্চকর সেই পথ ধরে ঝর্ণায় পৌঁছাতে হলে গাছের লতা ধরে পাহাড় বেঁয়ে কিছুদুর উঠতে হয়। এক্ষেত্রে বেশ সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। লতা ছিড়ে গেলে কিংবা হাত-পা পিছলে গেলে গুরুতর আহত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। পাহাড়ি এই ঝর্ণাটি গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে অনেকটাই শুকিয়ে যায়। পর্যটকরা অবশ্য বর্ষা মৌসুমেই ঝর্ণাটি দেখতে ছুটে আসেন দলবদ্ধ হয়ে কিংবা জুঁটি বেঁধে। তখন জলধারা বাঁধনহারা। যেখানে সেখানে আড্ডা দেয়া যায়। ঘুরে দেখারও শেষ নেই।
ঘাগড়ার পাহাড়ি ঝর্ণাটি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে চমৎকার একটি পিকনিক স্পট হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। বেশিরভাগ লোকই এ স্পটের খোঁজ জানেন না। ফলে এতো বিশাল হয়েও এটি পরিচিতি লাভ করতে পারেনি।
কিভাবে আসবেন ?
যাওয়া ও আসা ঢাকা থেকে সরাসরি আসতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, ডলফিন, এসআলম, সেন্টমার্টিন যোগে জনপ্রতি ৬০০-১২০০ টাকায় এসি-ননএসি বাসে সরাসরি আসা যায়। চট্টগ্রাম থেকে আসতে ষ্টেশন রোড ও অক্সিজেন মোড় থেকে সরাসরি বিআরটিসি, পাহাড়িকা সার্ভিস ও রয়েল এসি কোচে জনপ্রতি ১৩০-২০০ টাকায় সোজা ঘাগড়া সেনাক্যাম্পের উত্তর-পূর্বে আঁধা কিঃমিঃ দুরে কলাবাগান নামক এলাকায় নামতে হবে। এখানে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান রয়েছে। তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে মুল রাস্তাটির দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
থাকা ও খাওয়া
ঘাগড়া বাজারে খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকলেও আবাসন ব্যবস্থা একেবারে নাজুক। ঝর্ণার আশেপাশে ৩/৪টি ছোট খাটো চায়ের দোকান রয়েছে। তাতে শুধু চা, বিস্টুক, পান, সিগারেট ও নাস্তা আইটেম পাওয়া যায়। উন্নতমানের খাদ্য সামগ্রী নেই বললেই চলে। তবে ঘাগড়া বাজারে গেলে প্রায় সবকিছুই মেলে। রাত্রিযাপনের জন্য রাঙামাটি শহরে যেতেই হবে। ঝর্ণা থেকে রাঙামাটিতে বাস ও সিএনজির ভাড়া জনপ্রতি ৩০-৬০ টাকা। সারারাত সড়কপথে যাতায়াত করা যায়।
পাহাড়ি এলাকার রাঙামাটিতে ঘাগড়া, সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই লেক দেখতে ঢাকা থেকে একদল ঘুরতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে কথা হলে তারা আগামী নিউজের প্রতিবেদককে জানান, এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পকে আরো বিকশিত করতে সরকারের নানামুখি পর্যটন শিল্পকে উন্নয়ন ও প্রসারিত করতে হবে। পাহাড়ি অঞ্চলের পর্যটন পিকনিক স্পট গড়ে তোলার জন্য জায়গার কোন অভাব নেই বললেই চলে। সুতরাং এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের বর্হিবিশ্বের পর্যটক পিপাসু বিদেশীদেরকে উৎসাহিত ও উদ্ভুদ্ধকরণ করতে হবে। তাহলে সরকারের অনেকটা রাজস্ব ও পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে বলে অভিব্যক্ত করেন। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরতে আসা বিদেশীদেরকে উম্মুক্ত করা হলে পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
ঘাগড়া ঝর্ণাটি এক পলক দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার যুবক-যুবতীরা। অনেকে সুযোগ পেলেই ঘুরতে যান ঘাগড়া ঝর্ণাটি কিছু সময় কাটানোর জন্য। এ ঝর্ণাটি আধুনিকায়ন ও সৌর্ন্দয্য বর্ধন করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গড়ে উঠতে পারে এক নৈস্বর্গিক পর্যটন পিকনিক স্পট।