Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সেপ্টেম্বরে সংসদে পাস হবে সাইবার নিরাপত্তা আইন: আইনমন্ত্রী


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৩, ০৩:২৬ পিএম
সেপ্টেম্বরে সংসদে পাস হবে সাইবার নিরাপত্তা আইন: আইনমন্ত্রী

ঢাকাঃ ২০১৮ সালে প্রণীত বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের স্থলে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন আইনটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে পাস হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সোমবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে আইনটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আইনমন্ত্রী জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল নয়, কিছু ধারা ও সাজা এবং নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে সংসদ অধিবেশন বসবে। সেখানে এটি উপস্থাপন করা হবে। তখন এটি পাস হবে।

আইন পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করে আনিসুল হক বলেন, আমরা আলোচনা করে দেখেছি জনগণের এবং যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সেটা ভালোভাবে করা যাবে, সে কারণে এই আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আইনটি পরিবর্তনের ফলে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ হবে।

মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল হয়নি, এটি সংশোধন করা হয়েছে। আগে অনেক ধারা জামিন অযোগ্য ছিল, সেগুলো এখন জামিনযোগ্য করা হয়েছে। মানহানির মামলায় কারাদণ্ডের পরিবর্তন জরিমানা রাখা হয়েছে।

ডিজিটাল সিকিউরিট আইনের অনেকগুলো ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রথমত আগে মানহানির যে ধারা ছিল কারাদণ্ড সেটি পরিবর্তন করে এখন করা হয়েছে জরিমানা অনাদায়ে ৩ অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড থাকবে। কিন্তু মূল শাস্তি থাকবে জরিমানা। দ্বিতীয়ত, যেগুলো আগে অজামিন যোগ্য ছিল সেগুলো জামিন যোগ্য করা হয়েছে। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের পতাকা এসব নিয়ে যদি কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত তাহলে শাস্তি ছিল ১০ বছর, সেটা কমিয়ে এখন করা হয়েছে ৭ বছর।

তিনি বলেন, প্রতিটি আইনে যেখানে দ্বিতীয়বার সাজা হওয়ার কথা ছিল সেটি বাতিল করা হয়েছে। এখন দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে প্রথমবার যে সাজা হবে দ্বিতীয়বারও সেই সাজা হবে। সাইবার সিকিউরিটির ব্যাপারে আইনের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলেও জানান মন্ত্রী।

৪৩ ধারায় পুলিশের পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশী এবং গ্রেপ্তারের যে ধারাটা ছিল সেটা কি পরিবর্তন হয়েছে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বা সাইবার ক্রাইম যেগুলো হয় সেটা তাৎক্ষণিকভাবে যে যন্ত্র দ্বারা করা হয়েছে সেটা যদি জব্দ করা না হয় তাহলে সাক্ষ্য-প্রমাণ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নতুন আইনে এই ধারাটা আছে।

আগের আইনের মামলা চলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা চলবে কিন্তু সেটা সাইবার নিরাপত্তা আইনে চলবে।

কবে থেকে এই আইন চালু হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধীবেশন বসবে সেখানে এই আইনটি পেশ করা হবে তখন সেটা পাস করা হবে।

আগের আইন নিয়ে মানবাধিকার অনেক সংস্থা বা সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, এমনকি তারা অনেক কিছু সুপারিশ করেছিলেন। তাদের সুপারিশ আমলে নিয়ে কি এই আইন পরিবর্তন করা হয়েছে বা এই আইনে তারা কি সন্তুষ্ট হবেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা সন্তুষ্ট হবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও আমিসহ আমরা সবাই দেখে বসেছি যে জনগণের এবং এই আইনটি যে কারণে করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যটা ভালোভাবে পালন করা যাবে সেটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য, আমরা সেটাই করেছি।

জাতিসংঘ থেকে ২৮, ২৯ ও ৩০ এই ধারা বাতিলের কথা বলা হয়েছিল সেটা কি বাতিল হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলেছি এগুলো বাতিল করা যাবে না এগুলো সংশোধন করা হবে; আমরা সেটাই করেছি।

এই সংশোধনের পরে আপনি কি মনে করছেন সাংবাদিকদের হয়রানি কমবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি অবশ্যই মনে করি হয়রানি কমবে।

২৮, ২৯ ও ৩০ এর কয়টা ধারা পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ২৮-এ সাজা কমানো হয়েছে এবং আগে ছিল অজামিন যোগ্য বর্তমানে এটি জামিন যোগ্য করা হয়েছে। ২৯-এ সাজা ছিল কারাদণ্ড এখন সেটা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখানে শাস্তি হবে শুধু জরিমানা (২৫ লাখ টাকা); অনাদায়ে ৩ অথবা ৬ মাস জেল।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। বিশেষ করে এর ৫৭ ধারা দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি মানুষের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতে আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬-সহ মোট পাঁচটি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। আইনটি কার্যকরের পর থেকে সাংবাদিকদের ওপর এর অপপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। সাংবাদিক নেতারা বরাবরই আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেন তারা।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে