ঢাকাঃ ‘মৃত্যুর পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মায়ের কবরের পাশে যেন দাফন করা হয়’- এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই)। সেই ইচ্ছা অনুযায়ী তার জন্মভূমি নোয়াখালীতে তাকে দাফন করা হবে।
শুক্রবার (৯ জুন) দুপুরে সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী ও জেএসডির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন মন্টু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সিরাজুল আলম খান তার শেষ ইচ্ছার কথা সবাইকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না। শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে।’ সিরাজুল আলম খানের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার নিজ গ্রাম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।
মন্টু আরও জানান, এখনো দাফনের সময় নির্ধারণ করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর পরিবারের সদস্যরা সময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আজ তার মরদেহ শমরিতা হাসপাতালের মর্গে রাখা হবে। আগামীকাল শনিবার (১০ জুন) দুপুরের পর তার মরদেহ নোয়াখালী আনা হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন রোগে ভুগে শুক্রবার (৯ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সিরাজুল আলম খান। এর আগে গত ১ জুন তাকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
৬ জানুয়ারি ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাজনীতির ‘রহস্যপুরুষ’ সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই)। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৬ দফা দাবির সমর্থনে জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে তার মতভেদ তৈরি হয় এবং তিনি ছাত্রলীগ থেকে সরে যান। পরবর্তীতে তার অগ্রণী ভূমিকায় গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদ প্রতিষ্ঠায় তিনি নেতৃত্ব দিলেও তিনি দলটির নেতৃত্বে আসেননি। তবে তার দিক-নির্দেশনায়ই স্বাধীনতার পর জাসদ তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।
জাসদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ সিরাজুল আলম খান কখনো জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।
এমআইসি