ঢাকাঃ ঐতিহাসিক ১০ এপ্রিল আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে প্রবাসে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবাসে বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
এ দিবসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) ‘প্রকলেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স : ১০ এপ্রিল ১৯৭১ অ্যান্ড বার্থ অব আ সভেরিন রিপাবলিক’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করেছে। এছাড়াও দিনটি উপলক্ষে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন, আলোচনা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও ভূমিকাকে স্মরণ করছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনী। সারাদেশে শুরু হয় তাণ্ডব, নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মনোনীত করে ১০ এপ্রিল তারিখে সরকার গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এবং মন্ত্রীদের মাঝে দপ্তর বণ্টন করা হয়। সে অনুযায়ী এম মনসুর আলী (অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প), এ এইচ এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি), খন্দকার মোশতাক আহমদ (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
১০ এপ্রিল ১৯৭১, আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ নামের এই দলিল যতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে ততদিন মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। ১০ এপ্রিল সরকার গঠনের পর ১১ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি বেতার ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (পরে মুজিবনগর) সরকারের শপথ গ্রহণ ও আনুষ্ঠানিক যাত্রার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৭ এপ্রিলের শপথের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথ তলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। শপথ গ্রহণের পরই তাজউদ্দীন আহমদ এ স্থানের নাম দেন ‘মুজিবনগর’। পরবর্তী সময়ে প্রবাসী সরকার মুজিবনগর সরকার হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে।
বুইউ