Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা কুমিল্লা সিটি নির্বাচন


আগামী নিউজ | আগামী নিউজ প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২২, ০৮:৩৬ এএম
নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

ঢাকাঃ দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মাথায় এসে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রথম ভোটযুদ্ধ শুরু হচ্ছে আগামী ১৫ জুন। সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন ঘিরে তাই আগেভাগেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইসি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যাতে সবার আস্থা অর্জন করা যায় সে কারণে ইসির বাড়তি নজর কুমিল্লায়।

ইতোমধ্যেই মাঠে নামানো হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের। সেই সঙ্গে আচরণবিধি মানাতে পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশেরও টহল বাড়ানো হয়েছে নগরজুড়ে।

একাধিক রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা থাকলেও এই নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে ইসি। প্রত্যেক কেন্দ্রে ও ভোট দেওয়ার কক্ষে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) বসানো হবে বলেও জানানো হয়েছে। এ জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রায় আটশ’ সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। একই সঙ্গে প্রার্থীর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভোটারদের বায়োমেট্রিকসহ ভোটার তালিকার তথ্য, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তথ্য নিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক ইভিএম ‘কাস্টমাইজেশন’ করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

ইসি বলছে, কুমিল্লায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব ধরণের ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন। এখানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে চান তারা।

এদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন- স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পরিবর্তন না হলেও রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে কুমিল্লায় সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিকল্প নেই। এ জন্য একদিকে যেমন তাদের সতর্ক থাকতে হবে, অন্যদিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় ভোট নিয়ে মানুষের মনোভাব পরিবর্তন করানো কঠিন হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান কুমিল্লা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সব কেন্দ্রে ও ভোট দেওয়ার কক্ষে সিটি ক্যামেরা থাকবে। ইভিএম প্রস্তুতের সময় সব প্রার্থীর প্রতিনিধি থাকবে। কোথাও যেন আইনের ব্যত্যয় না হয় সেদিকে বেশি নজর থাকবে।’

নির্বাচনকে ঘিরে ইসির প্রস্তুতির বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রত্যেক নির্বাচন কমিশনই কিছু ভালো ভোট করেছে। এরাও হয়তো করবে। কিন্তু এটা কন্টিনিউ করতে পারলে আস্থা অর্জন সহজ হবে। এ জন্য আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। তবে স্থানীয় নির্বাচন নয়, সবার আগ্রহের জায়গা জাতীয় নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে কতটুকু ভালো ভোট করা সম্ভব হবে সেটা সময় বলে দেবে।’

বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে, তারা অনেক সময় পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করেন। এমন অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও পক্ষপাতের অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে কঠোর না হলে কোনো কিছুতেই পরিস্থিতি পাল্টাবে না।

এদিকে, বিদ্যমান ইভিএম আইন অনুযায়ী কেন্দ্রভিত্তিক যন্ত্রগুলো প্রস্তুতের সময় দলের প্রতিনিধিও রাখার কথা জানিয়েছেন ইসি মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভোটের জন্য ইভিএম প্রস্তুত করার সময় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এটা আস্থা তৈরিতে সহায়ক হবে। আইনেও এমনটা বলা আছে।’

ইভিএমের বিষয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, ইভিএম এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু অনেক উন্নত দেশ ইভিএম থেকে সরে এসেছে। কারণ এখানে কারসাজির অভিযোগ আছে। তাই সব রাজনৈতিক দল ঐক্যমত্য না হলে ইভিএমে ভোট করা কঠিন হবে। যদিও নূরুল হুদার কমিশন বিশেষ উদ্দেশে ভোটে ইভিএম ব্যবহার করেছিলেন।’

অন্যদিকে, কুমিল্লার এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী আছেন। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু স্বতন্ত্রভাবে লড়বেন। ইতোমধ্যে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাক্কু ভোটে দাঁড়ালে তৈমুর আলম খন্দকারের মতো বহিষ্কারও হতে পারেন বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বিএনপির আরও দুজন মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়েছেন কুমিল্লায়।

কুমিল্লা মহানগরে দুই লাখ ৩২ হাজারেরও বেশি ভোটার। নির্বাচনে ১০৩ কেন্দ্রের ৬৪০টি ভোট কক্ষ থাকবে। ভোটের দু’দিন আগে ১৩ জুন প্রতিটি কেন্দ্রে ‘মক ভোটিংয়ের’ সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটের আগে-পরে কয়েকদিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে।

এদিকে, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার (১৭ মে)। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে। এরপর থেকেই শুরু হবে প্রচার–প্রচারণা।

অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে কুমিল্লায়। এরই মধ্যে তিন শতাধিক মোটরসাইকেলের মালিককে জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি টাকা। মামলাও করছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।

সার্বিক বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো ধরণের ব্যত্যয় না হয়, সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছি। পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে পরিকল্পনাও বাড়ানো হবে। যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত মোকাবিলা করা যায়।

এছাড়া কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইসহাক জানিয়েছেন, নির্বাচনকে ঘিরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই বিজিবি প্লাটুনের দায়িত্বে থাকবেন। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন গত ২৫ এপ্রিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ মে, বাছাই ১৯ মে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে। একই দিন থেকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণাও শুরু হবে। নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন। কুমিল্লা সিটি ছাড়াও একই তফসিলে দেশের ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), তিনটি উপজেলা ও সাতটি পৌরসভার ভোট হবে।

এমএম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে