Dr. Neem on Daraz
Victory Day

দেশের মানুষ যেন খাদ্যে কষ্ট না পায়: প্রধানমন্ত্রী


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০, ০৮:৩৮ পিএম
দেশের মানুষ যেন খাদ্যে কষ্ট না পায়: প্রধানমন্ত্রী

ছবি সংগৃহীত

ঢাকাঃ বাংলাদেশের মানুষ যেন খাদ্যে কষ্ট না পায় সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘যখনই করোনা দেখা দিয়েছে, তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সাথে সাথে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি, আর কিছু না হোক আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ আমি জানি, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য মন্দা দেখা দিতে পারে, দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।’ 

আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।  করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর এই প্রথম দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হলো। 

সভায় সভাপতিমণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রয়াত দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মৃত্যুতে সভার শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যেন খাদ্যে কষ্টে না পায়। সাথে সাথে সারের দাম আরও কমানো হলো। যেটা বিএনপির আমলে ৯০ টাকা ছিল সেটা কমিয়ে এখন ১২ থেকে ১৩ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ঠিক এইভাবে কৃষকদের বিশেষ আমরা আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে দিয়েছি। সেখানে কৃষক যেন তার কাজ করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। অর্থাৎ এদেশের কৃষক শ্রমিক এদেশের সাধারণ মানুষ, এমনকি চাকরিজীবী বা আমাদের সব ধরনের মানুষের কথা বিবেচনা করেই আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে আমাদের এই সভা। করোনা ভাইরাসের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশ বলে না, বিশ্বব্যাপী যেহেতু এ অবস্থার সৃষ্টি। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই করোনাকে মোকাবিলা করে আমরা কিভাবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আর সবচেয়ে বড় কথা হল, যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে দাঁড়ানো। আর আমাদের বাংলাদেশের এমনি একটা অবস্থা, আমাদের তো শুধুমাত্র করোনার জন্য সর্বনাশ হচ্ছে সেটা তো না সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এবং সেটাও আমরা বলবো যে, অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সেগুলি মোকাবিলা করতে পেরেছি। আশঙ্কা ছিল যে বিশাল একটা বন্যা বা দীর্ঘস্থায়ী একটা বন্যা দেখা দিতে পারে। এখনও পানি আছে কিছু কিছু নদীতে। কিছু ভাঙনও হচ্ছে। এবার নদীভাঙনটা ব্যাপক হয়েছে। নদীভাঙনে কিছু কিছু এলাকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ একেবারে ঘরবাড়ি হারা হয়েছে।’

‘তারপরও এই অবস্থা মোকাবিলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে যে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করা এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যদি অন্য দলগুলি দেখি যারা হয়তো শুধু লিপ সার্ভিস অর্থাৎ ওই মুখে মুখে কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃতভাবে মানুষের কাছে যেয়ে মানুষকে সাহায্য করা, সেটা কিন্তু আমরা অন্য দল বা অন্য সংস্থার মধ্যে ওভাবে দেখিনি, এনজিও-টেনিজিও অনেকেই তো আছে, কিন্তু তাদেরকে আমরা ওভাবে দেখিনি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। সেই সাথে আমি প্রশংসা করি, আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তারা সবাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে।’ প্রশাসন, আমাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের ভূয়সী প্রশংসা করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে আমরা একটা মোটামুটি ভাল অবস্থানে আছি। বাজেটের ডেফিসিটি এবার আমরা ৬ শতাংশ ধরেছিলাম। এখানে আমার সিদ্ধান্ত ছিল দরকার হলে ১০ শতাংশ ধরবো। কিন্তু সেটা আমাদের লাগেনি। কাজেই তার মধ্যে রেখেই আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাটাকে সচল রাখতে পেরেছি। কারণ রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যার একটা ইকোনমিক পলিসি আছে, সেটাকে মাথায় রেখেই আমরা কিন্তু কাজ করে যাই। এর ফলে আমরা যেকোনও পদক্ষেপ নিচ্ছি খুব হিসাব করে। পার্টির পলিসি মেনে।’ 

‘বাংলাদেশ হচ্ছে একটা ডেল্টা। আমাদের ব-দ্বীপ’- এই ব-দ্বীপের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, এই নদী ড্রেজিংয়ের কথা সব সময় বলে আসছি। একটা সময় ছিল, আমি আর বোধহয় মতিয়া আপা ছাড়া আর কেউ ড্রেজিংয়ের কথা বলতই না। অনেক বিশেষজ্ঞরাও এটা নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলত। আমরা কিন্তু সেই আগের দিনে যেটা বলে ‘ভাঙা রেকর্ডের মতো’ এই ড্রেজিং ড্রেজিং বলেই যেতাম। তো এখন আবার প্রত্যেকে আমাদের পথে আসছে। এখন সেই বিশেষজ্ঞরাও বলে যে ড্রেজিংটা একমাত্র উপায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর ভাঙন হচ্ছে, নদীগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলোকে বাঁচানোর জন্য এটা দরকার। আমরা ডেল্টা প্ল্যান যেটা করেছি। ডেল্টা প্ল্যানের এইটাই লক্ষ্য, আমাদের যতগুলি বড় নদী এবং যা আছে, আমরা নদী ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বজায় রেখে এই ব-দ্বীপটা রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত করা এবং আমাদের দেশের মানুষকে কিভাবে সুন্দরভাবে একটা জীবন দেয়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নটা তরান্বিত করা সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি, বাস্তবায়ন করছি। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যেহেতু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই সংগঠনই এদেশের ম্বাধীনতা এনেছে কাজেই আমরা যখন সরকারে আছি, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যে দেশটা শুধু বর্তমানেই না, আগামী দিনের নতুন প্রজন্মের জন্য কিভাবে এই দেশটা এগিয়ে যাবে কিভাবে চলবে, সেটাই এখন থেকে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো বা আমরা নির্দেশনা দিয়ে রাখবো।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক আমরা যা করছি, সময়ের বিবর্তনে সেটা কিন্তু সংশোধন করতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে, পরিশোধন করতে হবে। এটা করতে হবে, এটা নিয়ম। সেটাও আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক একটা ধারণাপত্র অথবা একটা দিকনির্দেশনা; সেটা যদি সামনে থাকে তাহলে যেকোনও কাজ খুব সহজে যারাই আসুক ভবিষ্যতে তারাই করতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমার তো ৭৪ বছর বয়স। কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর কতদিন!’

তিনি বলেন, ‘কাজেই তারপরে যারা আসবে তারা যেন দিকহারা না হয়ে যায়, তারা যেন একটা দিকনির্দেশনা থাকে, একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে, না আমাদের এখানে যেতে হবে। সেজন্য আমরা প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করলাম। এরপর দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিলাম। ২০৪১ সাল পর্যন্ত কি হবে। আবার জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে-এসডিজি-২০৩০। সাসটেইনবেল ডেভলপমেন্ট গোল অর্থ্যাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নটা একটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেখানে যে ধারাগুলি আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করেছিলাম। এসডিজি বাস্তবায়নেও আমাদের সাফল্য আসবে, এজন্য আমরা ঠিক আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে ধারাগুলি সেগুলি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ থেকে ২০২১ এটাই আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ১৬-১৭’র মধ্যে নামিয়ে নিয়ে আসবো। ইতোমধ্যে ২০ ভাগ নামিয়ে এনেছি, যেখানে ৪০ ভাগ ছিল। সেটা আমরা ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের এসব কাজগুলি একটু শ্লথ হয়ে গেছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এই দারিদ্র্য যেন আবার মানুষকে গ্রাস করতে না পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি। পাশাপাশি একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যেন আর্থিকভাবে মানুষ চলতে পারে তার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। এ কারণে কোনভাবে সাধারণ মানুষের যেন কষ্টটা না হয়।’

নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে নগদ অর্থ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা কথা এসময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনও শ্রেণি যেন বাদ না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই করেছি। আমার মনে হয়, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলে এভাবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছে এবং মানুষকে সহযোগিতা করেছে। অন্য কোনও দল হলে এটা মোটেই করতো না। বরং তারা দেখতো যে, কিভাবে এখান থেকে ফায়দা লুটতে পারে। কিন্তু আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। এটা আমাদের নীতি, এটা আমাদের লক্ষ্য। এটা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘এমনকি অনেক ধরনের লোক, আপনারা শুনলে অবাক হবেন- এমনকি রিকশার পিছনে যারা পেইন্টিং করে তাদের খোঁজ করে তাদের সাহায্য দেয়া, এমনকি আমাদের আর্টিস্ট; যারা যন্ত্র সংগীতের সাথে আছে যাদের কোনও স্থায়ী চাকরি নাই তাদেরকেও আমরা সাহায্য করেছি। বিভিন্নভাবে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই এভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

আগামীনিউজ/জেহিন

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে