ঢাকাঃ বিএনপি জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির আজ ছিল দ্বিতীয় দিন। বুধবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের একাধিক স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
রাত ৮টায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার সকাল ৬ থেকে রাত সোয়া ৭টা পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৮টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ২টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, সাভার) ২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী) ২টি, রাজশাহী বিভাগ (বগুড়া) ১টি, রংপুর বিভাগে (পার্বতীপুর) ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪টি বাস, ১টি লরি, ১টি ট্রাক, ১টি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর পৃথক এলাকায় তিনটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর শ্যামলী ও নতুন বাজারে দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে শ্যামলীতে যাত্রী বেশে গাড়িতে উঠে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার জানান, বুধবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৭ মিনিটে বৈশাখী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
যাত্রী বেশে বাসে উঠে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা
ডিএমপি ট্রাফিক মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ইমরুল জানান জানান, বুধবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্যামলী স্কয়ারের সামনে ওয়েলকাম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। যাত্রী বেশে উঠে আগুন দিয়ে বাসটি থেকে নেমে যায় কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী। উপস্থিত জনতার সহযোগিতায় দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হয়। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের অপারেটর জয়নাল বলেন, সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর মুগদা এলাকায় মিডলাইন পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে বাসটি আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
এদিকে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে নগরবাসীর মধ্যে। যার প্রভাব পড়েছে সড়কেও। সকাল থেকে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কই ছিল ফাঁকা। সন্ধ্যার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি বাসে আগুন লাগার পর নগরীর সড়কগুলো আরও ফাঁকা হয়ে যায়।
অবরোধের কারণে অল্প পরিমাণ যাত্রী নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে ২৯টি লঞ্চ ছেড়েছে। সাধারণত সদরঘাট থেকে দৈনিক দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ৬৫-৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। যাত্রী কম থাকায় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পারাবত-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার সুমন বলেন, গত দুই দিন যাবত লঞ্চে যাত্রী নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে অনেক লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাও যাত্রী হয়, তা আমাদের লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ কম। এতে প্রতি ট্রিপে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নুরুদ্দীন তাসলিম বলেন, প্রথম দিন একটু ভয় পেয়েছিলাম। সকালের দিকে রাস্তায় গাড়ি কম থাকলেও সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। ২০ মিনিটেই বনশ্রী থেকে নতুন বাজার আসতে পেরেছি। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, সন্ধ্যার পর দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করছে।
এমআইসি