ঢাকাঃ নগরের মতো গ্রামের মানুষও যেন নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারেন তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কোনো গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না। সবাই সব নাগরিক সুবিধা পাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (পয়ঃশোধনাগার) উদ্বোধন শেষে দেওয়া বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, সচিব ও সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশ দেন তিনি।
গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ যেন সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পান সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ঢাকা শহর নিয়ে ভাবলে হবে না। প্রতিটি গ্রামে সকল নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে।
আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার ফেরাতে সক্ষম হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সাড়ে ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল, এটা যাদের হয়তো একটু বয়স হয়েছে তারা স্মরণ করতে পারবেন। যারা একেবারে হয়তো সে সময় ছোট ছিল তারা হয়তো ভাবতেই পারবে না। মনে করবে ওই হাতে মোবাইল অথবা ইন্টারনেট- এ সবই বুঝি ছিল। তা কিন্তু ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে ১৯৯৬ থেকে ২০০১, এরপর ২০০৯ থেকে ২০২৩ আমরা কিন্তু মানুষের জীবনমান বদলে দিতে সক্ষম হয়েছি।’
দেশের দারিদ্র্যতার হার, ভূমিহীনের সংখ্যা কমে এসেছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
নাগরিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি শোধন করে দিচ্ছি, এই পানি যেন নষ্ট না হয়। আমাদের দেশে আমি চাই, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই মিতব্যয়ী হতে হবে। সাশ্রয়ী হতে হবে। আমরা ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করব। ফলে এখানে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ঢাকা ওয়াসা এখন ২৬০ কোটি লিটারের বিপরীতে ২৭০ কোটি লিটার উৎপাদন করছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদন হচ্ছে। পানির বিলও শতভাগ আদায় হচ্ছে। এটিকে সরকারের 'ঈর্ষণীয় সাফল্য'।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন ভূগর্ভস্থ পানির থেকে ভূউপরস্থ পানির উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে সুয়ারেজ মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করে ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে ঢাকার ২০ শতাংশ পয়ঃনিষ্কাশন ঢাকা ওয়াসা করতে পারে। ঢাকার জন্য মোট ৫টি পয়ঃশোধনাগার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার চালুর মাধ্যমে পয়ঃশোধনাগার মাস্টারপ্লানের কাজ শুরু হলো।
ওয়াসার সিস্টেম লস ৪০ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে এসেছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায়, তখন ঢাকা শহরে মাত্র ৬০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পেত। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল এক কোটি বিশ লাখের মতো। পানি উৎপাদন হতো ১২০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার পানির বিল মাত্র ৬৪ শতাংশ আদায় হতো। রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ৩০০ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের সময় আমি আর আমার ছোট বোন জার্মানিতে ছিলাম। মিলিটারি ডিক্টেটর আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। ’৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণ এবং দলের নেতাকর্মীদের ওপর ভরসা করে আমি এক প্রকার জোর করে দেশে চলে আসি। তারপর থেকে শুরু হয় সংগ্রাম।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত না থাকলে কোনো দেশের উন্নতি হয় না। পৃথিবীর কোনো দেশে মিলিটারি ডিক্টেটর উন্নতি করতে পারে না, এটা হলো বাস্তবতা। ২১ বছর সংগ্রামের পর ’৯৬ সালে আমরা সরকারে আসি, মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য প্রথম সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ করি। সেভাবে শুরু হয় আমাদের পথ চলা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়ান, ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটির (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম উপস্থিত ছিলেন।
বুইউ