ঢাকাঃ উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাদ্যে মহাষষ্ঠীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ রবিবার (২ অক্টোবর) মহাসপ্তমী। আগের বছরগুলোতে করোনা মহামারির কারণে পূজার আনন্দ ছিল অনেকটাই ফিকে। তবে সেই বিবর্ণ সময় পেরিয়ে এবার দুর্গোৎসব জমজমাট হবে বলে আশা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
শনিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহাষষ্ঠীর আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় ঢাকঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গাকে অশুভ শক্তির বিনাশে ধরাধামে স্বাগত জানানো হয়। সন্ধ্যায় হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গতকাল সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। উৎসব-আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষকে। মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে নারী ও পুরুষের আলাদা লাইন। একইভাবে সারা দেশের পূজামণ্ডপের বেলতলায় ষষ্ঠীঘট স্থাপন করে অর্ঘ্য নিবেদন করেন পুরোহিতরা। এ সময় প্রদীপ ও ধূপ দিয়ে আরাধনা করা হয় দেবীকে। নিবেদন করা হয় ফুল, বেলপাতা, বিভিন্ন প্রকার ফল ও মিষ্টান্ন।
সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে দেবী দুর্গাকে পূজা হবে। অর্থাৎ ষোলটি উপাদান দিয়ে মহাসপ্তমীর দিনে দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয়। এছাড়া দেবী দুর্গার চুক্ষদানের পর ভক্তরা আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী মর্তে আসছেন গজে (হাতিতে) চেপে। গজ বা হাতিতে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ হলো শুভ। মনে করা হয়ে থাকে দেবী যদি গজে চড়ে মর্তে আসেন তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। হাতি হচ্ছে জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। আর ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত ছাড়বেন নৌকায় চড়ে। নৌকায় মনোকামনা পূর্ণ হওয়া বোঝানো হয়। ধরিত্রী হয়ে উঠে শস্য শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতিবর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা যায়।
আজ রোববার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। সোমবার মহা অষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটে এবং সমাপন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে।
এদিকে গতকাল থেকে পূজা শুরু হলেও রাজধানী ঢাকার মণ্ডপগুলোতে ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন একটা দেখা যায়নি। আয়োজকরা জানান, আজ মহাসপ্তমীতে দর্শনার্থীদের ভিড় কিছুটা বাড়তে পারে। আগামীকাল সোমবার মহাঅষ্টমী থেকেই মূলত মন্দিরে ও মণ্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ঢল নামবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মণ্ডপে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয়েছে মণ্ডপ পাহারার জন্য।
এমবুইউ