ঢাকাঃ নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ১৭ জুলাই থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে ইসি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (বুধবার) বিএনপিসহ তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসার কথা রয়েছে ইসির। তবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবে বিএনপি- এমনটাই জানিয়েছেন ইসির সহকারী জনসংযোগ পরিচালক আশাদুল হক।
ইসির ধারাবাহিক সংলাপ অনুযায়ী, বুধবার (২০ জুলাই) চারটি দলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ গণতন্ত্রী পার্টির সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সংলাপ করবে ইসি। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে গত তিন দিনের সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়া ১২টি দলের মধ্যে বিএনপির দুই শরিক বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি সংলাপে অংশ নেয়নি।
তবে বর্তমান ইসির ডাকে এবারই নয়, এর আগেও তাদের আমন্ত্রণে একবারের জন্যও ইসিতে যায়নি বিএনপি। এমন কি এই কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপেও বিএনপি অংশ নেয়নি।
এবারের সংলাপে না যাওয়ার কারণ হিসেবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কোনো নির্বাচন কমিশনই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো ক্ষমতা নেই। দেশের মানুষ চায় না, এই নির্বাচনের কমিশন এবং সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক। এ কারণে ইসির কোনো সংলাপ ও আলোচনার বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্যই করি না।
যদিও ইসি বলছে— যতক্ষণ পর্যন্ত না আসে ততবার বিএনপিকে সংলাপে ডাকবে সংস্থাটি।
নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান সংলাপে অংশ নিয়ে অন্তত এক কাপ চা খেয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে।
এদিকে অনুষ্ঠেয় সংলাপে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জন্য দুই ঘণ্টা করে সময় বরাদ্দ রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য ৩৬টি নিবন্ধিত দলের জন্য রাখা হয়েছে ১ ঘণ্টা করে সময়।
কোন দলের সঙ্গে কবে সংলাপ
প্রথমদিন অর্থাৎ ১৭ জুলাই সংলাপে আমন্ত্রণ পেয়েছিল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। এ চার দলের মধ্যে বিএমএল বাদে বাকি তিনটি দল উপস্থিত ছিল।
সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলেন (এমএল) এর সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
আজ ২০ জুলাই সময় পেয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
২১ জুলাই পেয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও গণফ্রন্ট।
২৪ জুলাই সময় পেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ।
২৫ জুলাই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।
২৬ জুলাই জমিয়েতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি অংশ নেওয়ার জন্য সময় পেয়েছে।
২৭ জুলাই সময় পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।
২৮ জুলাই রয়েছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
সবশেষ ৩১ জুলাই তালিকায় আছে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় দেড় বছর আগে আগস্টে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বসেছিল তৎকালীন কে এম নূরুল হুদা কমিশন। এবার একই পথ ধরে সংলাপ শুরু করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।
ওই সময় ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এ ক্ষেত্রে সকাল-বিকেল দুটি করে দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে যে দু’দিন বসেছিল, সেদিন আর কোনো দলের সঙ্গে সংলাপ করেনি নির্বাচন কমিশন।
ইসির সঙ্গে সে সময় ৩৯টি দলই সংলাপে অংশ নেয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে ও ইলেকট্রনিংক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভোটগ্রহণ না করার সুপারিশ করে।
সংলাপের মতামত পর্যালোচনা করে দু’টি অংশে ভাগ করে একটি অংশকে নিজেদের বাস্তবায়ন যোগ্য মনে করে ইসি, যেটি তাদের কাছেই রাখে। অন্য অংশটি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়।
এমবুইউ