মাদারীপুরঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় জনতার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ করতে প্রস্তুত। নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি, দেওয়ার কিছু নাই। আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।
শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মা ভাই হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের পাশেই আমি আছি, আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, এই ওয়াদা আমি দিয়ে গেলাম।’
এসময় পদ্মা সেতু করার মধ্য দিয়ে বাধাদানকীদের একটা উচিত জবাব দিয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাধা দিয়েছে, তাদের একটা জবাব আমরা দিয়েছি। এই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তাদের একটা সমুচিত জবাব দিতে পেরেছি। জাতির পিতা বলেছেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ আসলেই পারে নাই। পারবেও না।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ দিন। কিছুক্ষণ আগে এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে এসে এই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে যাই। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলছে, কখনোই সেতু করতে পারবে না। আমরা কিন্তু করতে পেরেছি, আপনারা পাশে ছিলেন বলে। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি। তিনি বলেন, বাবা-মা ভাইবোন হারিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারাও আমার পাশে ছিলেন।
এসময় জনতার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহস দিয়েছেন আপনারা। শক্তি দিয়েছেন আপনারা। আমিও আপনাদের পাশে আছি। এই দেশ আপনাদের, এই দেশ আমাদের। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা এই দেশকে গড়ে তুলবো। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে চাই।
এর আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেষে বেলা ১২টা ৫৩ মিনিটে মাদারীপুরের শিবচরের সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ১২টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি ফলক মঞ্চে যান তিনি। সেখানে দ্বিতীয় দফায় মোনাজাতে অংশ নেন।
জাজিরা প্রান্তে সেতুর মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর এক পাশে তার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং অপর পাশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগে এক পাশে অস্থায়ী প্যান্ডেলে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সমাবেশে ভাষণ শেষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম, সিলমোহর ও ১০০ টাকার স্মারক নোট উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর গাড়িবহর নিয়ে ১১টা ৫৫ মিনিটে টোল প্লাজায় টোল প্রদান করেন তিনি। ১১টা ৫০ মিনিটে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১টা ৫৯ মিনিটে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমেই খুললো পদ্মা সেতুর দোর।
এমবুইউ