ঢাকাঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই ছয় দফা প্রণয়ন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভায় যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, 'ছয় দফা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। ছয় দফার প্রণয়ক বঙ্গবন্ধু নিজেই। তিনি তখন আলফা ইন্সুরেন্সে চাকরি করতেন। হানিফ সাহেব তখন বিএ পাস করেছেন। তাকে নিয়ে আসেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু যখন বলতেন তখন হানিফ সাহেব ছয় দফা ড্রাফট করতেন। ছয় দফা সম্পর্কে জানলে শুধু জানতেন হানিফ। কারণ তিনিই এই ছয় দফা বাংলা ও ইংরেজিতে টাইপ করে দিয়েছিলেন।'
ছয় দফা দাবির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলোর একটা গোলটেবিল বৈঠক ডাকা হয়। ওই গোলটেবিল বৈঠকেই তিনি এই ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফা কে প্রণয়ন করেছে, কে লিখেছে অনেকে অনেক কথা কিন্তু বলে। আপনারা জানেন যে মার্শাল ল' হওয়ার পর ৫৮ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হন। ৭ অক্টোবর মার্শাল ল হয়, ১১ অক্টোবর তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১২ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তো একটার পর একটা মামলা। প্রায় ১৫টা মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'উচ্চ আদালতে সোহরাওয়ার্দী নিজে রিট করেন এবং তারপরে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তার (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি নিষিদ্ধ। ঢাকার বাইরে তিনি যেতে পারবেন না। যেতে গেলে পুলিশ স্টেশনে খবর দিয়ে যেতে হবে, পারমিশন নিয়ে যেতে হবে। এই অবস্থা ছিল। তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। তখন তাজউদ্দিন ফতুল্লাতে চাকরি করতেন। বঙ্গবন্ধু নিজে গাড়ি নিয়ে সেখানে গিয়ে তাজউদ্দিনকে নিয়ে আসেন। মোহাম্মদ হানিফ কেবল বিএ পাস করেছেন, তাকে তার (বঙ্গবন্ধুর) পিএ হিসেবে এই আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, যখন ছয় দফা প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু নিজে এটা বলতেন, লিখতেন এবং হানিফ সেটা টাইপ করত। কাজেই ছয় দফার মূল প্রণয়ক বঙ্গবন্ধু নিজেই এবং এটা একমাত্র কেবল মোহাম্মদ হানিফ জানত। বঙ্গবন্ধু যখন করাচিতে এই ছয় দফা পেশ করতে যান, ৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলের সম্মেলনে তাকে তীব্র বাধা দেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের পক্ষ থেকে। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে আমাদের পূর্ববঙ্গেরও যারা ছিল কিছু বাঙালি, তারাও এটা দিতে দেয়নি। তখন এই ছয় দফার কিছু দফা ওখানে প্লেস করে দেন। যার ফলে তার (বঙ্গবন্ধু) জীবনের ওপর হুমকিও আসে। এরপর তিনি যখন ফিরে আসেন এয়ারপোর্টে তিনি প্রথম এই ছয় দফা সম্পর্কে জানান এখানকার প্রেসকে। পরদিন আবার প্রেস কনফারেন্স করে এটার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে এই ছয় দফার উপস্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও পাওয়া যাবে না যে কোনো একটা দাবি এত অল্প সময়ে এত জনপ্রিয়তা পেতে পারে। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দিলেন। স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা বলতে গেলে বলতে হয় ৬১ সালের কথা। ৬১ সাল এবং ৬২ সাল এই সময়ে। ৬১ সালে তিনি আমাদের ছাত্র নেতাদের ডেকে তাদেরকে দিয়ে একটা নিউক্লিয়াস ফর্ম করা। প্রত্যেকটা জেলা এবং থানায়। তখন উপজেলা ছিল না, মহকুমা ছিল। সেখানে একেকটা নিউক্লিয়াস ফর্ম করা এবং স্বাধীনতার যে বার্তাটা সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সেটা খুব এমনভাবে যাতে মানুষ ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেয়। ছাত্রলীগকে দিয়েই কিন্তু সেটা তিনি শুরু করিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, শেখ ফজলুল হক মনি বিএম কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তাকে দিয়েই কিন্তু এটা শুরু। সেই সময় বোধ হয় আরেকজন ছিল সে এখন আমাদের পার্টিতে নেই, অন্য পার্টিতে চলে গেছে। নামও আমি নিতে চাই না। ওইগুলো ভুলে গেছে তারা। কিন্তু আসলে এখানে এটা মনি ভাইকে দিয়ে নিউক্লিয়াস ফর্ম করার কথা বলা হয়। এখানে আমু ভাই একমাত্র এখানে আছেন। আর লতিফ সিদ্দিকী আছেন। এ রকম কয়েকজন আছে। আর যেগুলো বিএনপিতে গেছে ওই দুর্বৃত্তদের নাম আমি নিতে চাই না। ওইগুলো সব বেইমানি করছে।
গণভবন প্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ আলোচনা সভাটি সঞ্চালন করেন।
এমবুইউ