ঢাকাঃ চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৮ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এবারের ধাপে ৮০০ ইউপিতে ব্যালট এবং ৩৮টিতে ইভিএমে নির্বাচন হবে।
ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য নির্বাচনি মালামাল পৌঁছে গেছে।
তৃণমূলের এই ভোটে উৎসব-আমেজের পাশাপাশি ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কারণ কয়েক ধাপের ইউপি ভোটে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পরও তারা থাকবেন। সেই সঙ্গে মাঠে রয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির তথ্যানুযায়ী, চতুর্থ ধাপে ইউপি ভোটে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য এ তিন পদে মোট ৪৬ হাজার ৫৭২টি মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দলসহ চেয়ারম্যান পদে মোট ৪ হাজার ৯১৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তিন হাজার ৫৪৬ জন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ হাজার ৮৫০ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩১ হাজার ৮০৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৮১৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯ হাজার ৫১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
ইসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪৮ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১৩৫ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে মোট ২৯৫ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ১৬টি রাজনৈতিক দল এ ধাপে প্রার্থী দিয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা তিন-চতুর্থাংশ। এর আগে তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৬০ জন এবং প্রথম ধাপে ১৩৮ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নির্বাচনে ১ কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৯ হাজার ২২৪টি কেন্দ্রের ৪৯ হাজার ৮৩২টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইসির যুগ্ম-সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারও শেষ হয়েছে। একই সময় থেকে মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ রয়েছে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে ২৭ ডিসেম্বর (সোমবার) দিনগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত। এছাড়া শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ২৬ ডিসেম্বর (রোববার) দিনগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত সব যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সাংবাদিক, নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিতদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
তিনি আরও জানান, ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোটের দায়িত্বে থাকবেন। প্রতি ইউপিতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিনটি ইউপিতে তিনটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় র্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি উপজেলায় বিজিবির দুটি মোবাইল ফোর্স (দুই প্লাটুন), একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন), প্রতি উপকূলীয় উপজেলায় কোস্টগার্ডের দুটি মোবাইল টিম (দুই প্লাটুন) ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন), প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ইউপি ভোটকে কেন্দ্র করে বেশকিছু এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে এবার। পরিস্থিতি সামলাতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। পাশাপাশি সব পক্ষের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
করোনা মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় প্রথম ধাপে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর এবং তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হয়। এবার চতুর্থ ধাপে ৮৩৮ ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে।
পঞ্চম ধাপে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি ৭০৭ ইউপিতে এবং ষষ্ঠ ধাপে ৩১ জানুয়ারি ২১৯ ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
আগামীনিউজ/বুরহান