ঢাকাঃ ই-কমার্সে গ্রাহক প্রতারণার ডামাডোলের মধ্যে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
গত বছর অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট বা ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক লাখ টাকা দামের একটি গরু কিনলেও সেটি আর বুঝে পাননি তিনি।
রোববার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে ‘প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে ইআরএফ এর ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় নিজের ই-কমার্স অভিজ্ঞতার কথা বলেন টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, “কোরবানির গরু ডিজিটাল হাটে বিক্রি করার কথা। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হিসাবে আমাকেও রাখা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে আমাকে একটা গরু দেখানো হল, আমি একটা গরু কিনলাম। গরুর দাম বলা হল এক লাখ টাকা। ভাবলাম আমি না হয় শুরুতে একটা গরু কিনি। তারপর বসে আছি, কবে আমাকে গরু ডেলিভারি দেবে, কবে কী করবে?
“৬/৭ দিন পর তারা আমাকে জানাল যে, সেই গরু আর নেই। সেই গরুটা আরেকজন নিয়ে চলে গেছে। তাহলে কী হল ব্যাপারটা? আমি গরুটার টাকাও সাথে সাথে দিয়ে দিয়েছিলাম, সেটা আরেকজন নিয়ে চলে গেল! আমি মন্ত্রী, আমারই যদি গরু না থাকে তাহলে কীভাবে হবে?”
এরপর ওই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আরেকটি গরু দেওয়া হয় টিপু মুনশিকে।
“তারা বলল, স্যার চিন্তা কইরেন না। আপনাকে আরেকটা গরু দিয়ে দেব। আরেকটা গরুর ছবি দেখিয়ে বলল- এই একটা গরু আপনার জন্য আছে। আমি ভাবলাম আচ্ছা কী করা যাবে, আমি তো তাদের হাতে বন্দি। আমি নিজেই একটা হয়রানির মধ্যে পড়ে গেলাম। তারপর একটা গরু দেখাল যেটার দাম ৮৭ হাজার টাকা। আমি ভাবলাম ১৩ হাজার টাকা বেঁচে গেল। তারপর বলল যে, এই বাকি ১৩ হাজার টাকার মধ্যে আপনাকে একটা খাসি দেব। সব কিন্তু তারাই করছে, আমি শুধু শুনেই যাচ্ছি। আমি বলেছি ঠিক আছে, আপনারা জবাই করে তিন ভাগের এক ভাগ পাঠাই দিয়েন, বাকিটা আপনারা বিতরণ করে দিয়েন।”
তবে গরুর মাংসের সঙ্গে ছাগলটি জ্যান্তই পাঠিয়ে দিয়েছিল বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রতারণার মামলায় তোলপাড়ের মধ্যে তদারকে অবহেলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেও যখন অভিযোগের আঙুল উঠছে, তখনই নিজের অভিজ্ঞতা বললেন টিপু মুনশি।
ই-কমার্সগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘কঠোর নিয়ন্ত্রণে’ আনতে আরও শক্ত আইন করার পক্ষে মত দেন তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, “আজকে ইভ্যালি নিয়ে সমস্যা হয়েছে- এটা ঠিক। ইভ্যালি কী পরিমাণ প্রচার-প্রপাগান্ডায় খরচ করেছে! এখানে অনেক কথা। আপনারা এগুলো বুঝবেন। ইভ্যালি তো আরজেএসসি (যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর) থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। লাখ লাখ কোম্পানি আরজেএসসি থেকে লাইসেন্স নেয়। অনেকগুলো আবার লাইসেন্সও নেয়নি।
“ই-অরেঞ্জের কথা যদি বলেন, তারা আরজেএসসি থেকে লাইসেন্সও নেয়নি। তারাও কিন্তু একটা ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করে গেছে। এই ধরনের ফর্জারির জন্য ৪২০ ধারায় তাদের অ্যারেস্ট করা যাবে। কিন্তু সেটা এমন একটা ধারা যেটাই তারা বেইল নিয়ে চলে যাবে। তাই শক্ত আইন করতে হবে।”
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটায় মানুষের আরও সচেতন হওয়ার উপর জোর দেন ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আনা টিপু মুনশি।
আর মানুষের সচেতনতা বাড়াতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
“দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। ই-কমার্স বিষয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে।”
ইভ্যালির মডেলে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের চিন্তা রয়েছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
“ইতোপূর্বে যে সব প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করেছে, সেগুলোর অনেক সম্পদ আছে। সম্পদগুলো বিক্রয় করলে অনেকের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব। এগুলো বিষয় মাথায় রেখে সরকার কাজ করছে।“
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারস মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য বি এম সালে উদ্দীন, মনজুর কাদির, নাসরিন বেগম, কমিশনের উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মাফরুহ মুরফি, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি শারমীন রিনভি এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।