ঢাকাঃ দেশে আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে নারী নিখোঁজের ঘটনা। গত ছয় মাসে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানায় ১৩৯ জন নারী নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা করেছেন অভিভাবকরা। একই সময় জেলার মতলব উত্তর থানায় ৪৩ নারী ও শিশু নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জিডি করা হয়েছে। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ৯৭ জন নারী ও কিশোরী নিখোঁজ থাকার বিষয়ে জিডি হয়েছে। শুধু চাঁদপুরের থানাগুলোতে নয়, দেশের অন্যান্য থানাতেও নারী ও কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার জিডি এবং মামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক।
এত নারী নিখোঁজের রহস্য কী।
এর কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে নানা চমকপ্রদ তথ্য। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, নিখোঁজ এসব নারীর মধ্যে অধিকাংশই স্কুল-কলেজের ছাত্রী, আর বড় একটি অংশ প্রবাসীর স্ত্রী। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে ছেলেদের প্রতি আসক্ত হয়ে ঘর ছাড়ছেন। আবার ঘর ছেড়ে অনেকেই হচ্ছেন প্রতারিত ও পাচারের শিকার।
১ জুন রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন ভারতের বেঙ্গালুরুতে ৭৭ দিন আটকে রেখে যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার এক তরুণী। ওই মামলার আসামি রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু, মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদেরসহ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ‘গত আট বছরে এই চক্রটি প্রায় দেড় হাজার নারীকে পাচার করেছে।’ অপরাধ-বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নিখোঁজ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে জিডি হওয়া বহু নারী বিদেশে পাচারেরও শিকার হচ্ছেন।
সারা দেশে বছরে কত নারী নিখোঁজ হন এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই পুলিশ সদর দফতরের কাছে। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, ‘থানাভিত্তিক জিডির তথ্য থাকলেও কেন্দ্রীয়ভাবে সেটি সমন্বয় করা হয় না।’ তাই বছরে দেশ থেকে কত নারী নিখোঁজ হয় এর পরিসংখ্যান জানা যায়নি। কোনো বেসরকারি সংস্থাও নিখোঁজের বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ না করায় এর প্রকৃত হিসাব পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
মাত্র পাঁচ মাসে ৯৭ জন নারী ও কিশোরী নিখোঁজ থাকার তথ্য দিয়ে জিডি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো গভীর পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, নিখোঁজ নারীদের বেশির ভাগই প্রবাসীদের স্ত্রী। সাধারণ মানুষের সবার হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ভিগো, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক অ্যাপসসহ বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করেন। এসবের মাধ্যমে ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাদের। অনেকে বখাটে যুবকদের পাল্লায় পড়ে ঘর ছাড়ছেন।’
ওসি আরও বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্কুল-কলেজে পড়া কিশোরীরা ঘর ছাড়ছে। তারাও স্মার্টফোন ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলেদের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করছে এবং আসক্তি ও নানাবিধ প্রলোভনে পড়ে ঘর ছাড়ছে।’ তার মতে, ‘করোনা সংক্রমণজনিত কারণে স্কুলগুলাতে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিয়ে মনে করেন, সন্তানরা অনলাইনে ক্লাস করে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সেটি হচ্ছে না। প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক ছেলেমেয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।’