ঢাকাঃ স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা নিয়ে গতকাল তুমুল আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদে। মহামারীকালে অক্সিজেন সংকট, সংসদে দেওয়া তার বক্তব্যের জের ধরে অনির্ধারিত আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলাধুনা করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। উঠেছে তার পদত্যাগের দাবিও। যদিও মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ সময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না।
আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, বগুড়া কভিডের হটস্পট। গত তিন দিনে বগুড়ায় মৃতের সংখ্যা ২৪ জন। মৃত্যুর কারণ হলো উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংকট। সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। থাকলে ভালো হতো। তিনি বগুড়া ২০টি করে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সরবরাহ এবং সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহের দাবি জানান।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মাস্ক নিয়ে কথা হলো। সেদিন আমি এখানে বলেছিলাম, মন্ত্রীকে ডিরেক্ট বলিনি। বলেছিলাম চার টাকার মাস্ক ৩৫৬ টাকায় কেন কেনা হলো? উনি তদন্ত করবেন, দেখবেন, ব্যবস্থা নেবেন। এই হলো মন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি সেটা এড়িয়ে বললেন, এটা সত্য না। আমি তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসেছি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। দুদকে চলে গেছে। উনাদের একটি প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) স্বীকার করেছেন। উনি বলেছেন, উনি ওই সময় ছিলেন না। উনি কী করবেন? স্বাস্থ্যমন্ত্রী এড়িয়ে না গিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতেন। ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নিতে হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বেদনাদায়ক বিষয়। সাতক্ষীরায় হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে সাতজন কভিড রোগী এক ঘণ্টার মধ্যে ছটফট করতে করতে মারা গেছেন।
এই সাতক্ষীরা হলো, এর আগে যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন, রুহুল হক সাহেবের এলাকা। এখানে তো ফাইভ স্টার হাসপাতাল হওয়া উচিত। অক্সিজেনের অভাবে কীভাবে রোগী মারা যান বুঝি না। মন্ত্রীরা যান-আসেন, নিজের এলাকাটাও ঠিক রাখতে পারেন না? তিনি বলেন, অক্সিজেন প্ল্যান্ট করা অত্যন্ত সেনসিটিভ কাজ। সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা প্রপার ডিজাইন করে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসাতে হয়। অক্সিজেন সাপ্লাই লাইনে প্রোপার ডাইমেনশন থাকতে হবে। এখানে যদি কোনো লিকেজ তাকে তাহলে আগুন ধরে যাবে। মন্ত্রী ভালো করে জানেন। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেল। ঠিক আছে, আপনি ম্যানুয়াল করতেন। সিলিন্ডার মুখে দিলে জীবনটা তো বাঁচত কিছুক্ষণের জন্য। পারলেন না। নার্স, ওয়ার্ড বয়, ডাক্তার কী কাজ করলেন, দেখবেন না আপনি? আমরা তো রোগী আইসিইউতে ঢুকায়ে দেই। যাওয়ার পর কী চিকিৎসা হয় কেউ খবর রাখে না। ওখানে অধিকাংশ রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন। বলে যে, রোগীর অবস্থা খারাপ। ভেন্টিলেশন দিচ্ছি। এক ঘণ্টার পর বলে রোগী মারা গেছে, নিয়ে যান। কোনো চিকিৎসা হয় না।
ফিরোজ রশীদ বলেন, একটা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত আমাদের সামনে এলো না। সারা পৃথিবীতে মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু এভাবে চিকিৎসা দিতে গিয়ে এ ধরনের অনিয়ম মানা যায়? অনেক কিছু নাকি দিল। একটা হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। হাই-ফ্লো ক্যানুলা নেই। বগুড়া হাসপাতালে অক্সিজেনই নেই। জিজ্ঞেস করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলে সব দিচ্ছি, কোথাও কিছু দেয়নি। এভাবে একটা বছর সময় নষ্ট করেছি। এক বছরের মধ্যে হাসপাতাল ওয়েল ইকুইপড করতে পারতাম। আমাদের এমপিদের দায়িত্ব দিত, সব কিছু করে দিতে পারতাম। কিন্তু দায়িত্ব না দিয় আমলাদের দেয়। জবাবদিহি আমাদের করতে হয়।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত দুই দিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্লামেন্টের মতো জায়গায় আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করলেন। আমেরিকাতেও মানুষ মারা যায়। আমাদের এখানে অনেক মানুষ কম মারা যায়। মনে হলো যেন ওইটা উনার ক্রেডিট। উনার কারণেই বাংলাদেশে মানুষ মারা যায়নি।
চুন্নু বলেন, তিনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) বললেন, এক বছরে নাকি অনেক কাজ করেছেন। আজকের খবরে আসছে, বাংলাদেশের ৩৭টি জেলায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে পাঁচজন রোগী অক্সিজেন পায় তো ২০ জন লাইনে থাকে। কেবলমাত্র অক্সিজেনের কারণে ছটফট করে মারা যাচ্ছেন। পত্রিকায় এত লেখালেখি হচ্ছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি একটি হাসপাতালে গিয়ে এগুলো দেখেছেন। তিনি কী করেন? তিনি জুম মিটিং করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তবে মনে হচ্ছে, কোনো এমপিই দায়িত্ব পালন করেন না। এ বক্তব্য আপত্তিজনক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোটা হাউসকে অপমান করেছেন। তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ হওয়া দরকার।